ঘরের আগুনে পুড়ছে বিএনপি
ঘরের আগুনে পুড়ছে বিএনপি
- আপডেট সময় : ০৭:৪৬:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৪৫ বার পড়া হয়েছে
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএনপি। প্রায়ই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারীসহ নানা অভিযোগ করছে। এ নিয়ে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গোয়ালন্দ প্রেস ক্লাবে বিএনপির একটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে। আগের দিন বুধবার অপর পক্ষ একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের নেতাকর্মীকে চাঁদাবাজ, দখলবাজ বলাসহ নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য দেয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই দিন বিএনপির নেতাকর্মীরা একত্রে মিছিল করেছিলেন। কিন্তু এরপরে তাদের আর একসঙ্গে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। বরং প্রায় প্রতিদিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে আসছে তারা। গত মঙ্গলবার গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি পক্ষ বিএনপি নেতা আসলাম মিয়ার বড় ভাই বিচারপতি সামছুল হক মিয়াকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁর ফাঁসির দাবিতে মানবনন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সেদিন বিকেল ৫টার দিকে অপর পক্ষ মানবনন্ধন পালনকারীদের চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও সংস্কারপন্থি হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিচারের দাবি করেন। এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় যে কোনো সময় গোয়ালন্দে বড় ধরনের সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে দলের সাধারণ নেতাকর্মী দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। সব মিলিয়ে উপজেলা বিএনপি এখন নিজ ঘরের আগুনে পুড়ছে।
নাম প্রকাশ না করে বিএনপির একজন কর্মী আক্ষেপ করে বলেন, বিএনপির ভুল ধরার জন্য আওয়ামী লীগের দরকার নেই, বিএনপিই যথেষ্ট। তারা নিজেরাই একে অপরকে গালাগাল করছে।
জানা যায়, গোয়ালন্দে বিএনপির সক্রিয় দুটি পক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি আসলাম মিয়া। খৈয়ম পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সুলতান নুর ইসলাম মুন্নু মোল্লা, জেলা বিএনপির সদস্য এবিএম ছাত্তার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ। অপরদিকে আসলাম পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজামউদ্দিন সেখ, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ আহমেদ প্রমুখ।
আসলাম পক্ষের নেতারা দাবি করেন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ওয়ার্কার্স পার্টির একজন নেতা ছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে খৈয়ম দলের মধ্যে সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর অগণতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে স্থানীয় বিএনপির পুরোনো ও ত্যাগী নেতাকর্মীর বড় একটি অংশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এমন অবস্থায় আসলাম মিয়ার নেতৃত্বে ওইসব পরীক্ষিত নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখন মাঠে আছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য ও গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সুলতান নুর ইসলাম মুন্নু মোল্লা জানান, একটা সময় রাজবাড়ী জেলায় বাম রাজনীতির প্রভাব ছিল, তাই ৯০ দশকে তিনি ও তাঁর নেতা আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে ২০০০ সালের আগে থেকে তারা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে এ পর্যন্ত সব আন্দোলন সংগামে সক্রিয় থেকেছেন। অথচ আসলাম মিয়া আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপির চরম ক্ষতি করেছেন। বিভিন্ন সময় স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। ওই গ্রুপটি তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আসছেন। কিন্তু তারা তাদের নেতা আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নির্দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপির কমিটি হবে জনসম্মুখে। বিগত আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার মতো চুপিচুপি কমিটি করা হয়েছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে বিএনপির সম্মেলন করা হয়েছে। বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের এলাকায় আসার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজামউদ্দিন সেক বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ওই গ্রুপটি বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও লুটপাট করে যাচ্ছে। বাধা দিলেও তারা মানছে না। তারা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলের উচ্চ পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতার কারণে শহরে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।