রাজবাড়ী স. আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক ২ বছর ধরে নিখোঁজ
- আপডেট সময় : ১০:২৭:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৪২ বার পড়া হয়েছে
রাজবাড়ী শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের এক শিক্ষক ২ বছরেরও বেশী সময় ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী চক্র পরিকল্পিতভাবে তাকে অপহরণ করেছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আবু জোফার মোঃ সাইফুল্লাহ (৫৪)। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মড়ডাঙ্গা গ্রামের মওলানা আঃ মতিনের ছেলে। বৈবাহিক জীবনে ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক তিনি।
রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এ.কে.এম ইকরামুল করিম বলেন, প্রভাষক আবু জোফার মোঃ সাইফুল্লাহ ২০২২ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ১৯ জুন থেকেই সে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এরপর তাকে নোটিশ করা হলেও তিনি অদ্যাবধি কর্মস্থলে যোগদান করেননি। এমনকি তার অবস্থান সম্পর্কে কোন খোঁজ খবরও পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ কলেজ শিক্ষক সাইফুল্লাহর স্ত্রী ফরিদপুরের বোয়ালমারী ময়না সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হোসনেয়ারা পারভীন বলেন, গত ২ বছরে আত্নীয়-স্বজনের বাড়ী সহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। পুত্র নাফিস নিয়াজ খাঁন রাজবাড়ী থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ এ বিষয়ে কোন রহস্য উ˜্ঘাটন করতে পারেনি।
স্ত্রীর অভিযোগ সম্প্রতি তার স্বামীর ক্রয়কৃত একটি জমি থেকে গাছপালা কর্তন ও জবর দখলের চেষ্টার সময় কলেজ শিক্ষক সাইফুল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের বিষয়টি জনসন্মুখে প্রকাশ পায়।
হোসনেয়ারা পারভীন বলেন, কয়েক বছর আগে রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের গোপীনাথদিয়া এলাকায় একটি জমি ক্রয় করেন তার স্বামী কলেজ শিক্ষক আবু জোফার মোঃ সাইফুল্লাহ। ওই জমি জাল দলিল করে দীর্ঘদিন দখলের পাঁয়তারা করে আসছিল রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর এলাকার হুমায়ন কবীর সহ একটি চক্র। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
এছাড়া শ্রীপুর এলাকায় নিজের স্ত্রীর মালিকানাধীন আরেকটি জমি বিক্রির কথা বলে হুমায়ন কবীর কলেজ শিক্ষকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা বায়না নেয়। সাইফুল্লাহ কামালদিয়া এলাকার বাড়ী বিক্রি করে ওই টাকার যোগান দেয়। কিন্তু ওই জমি অন্যত্র বিক্রি করে দেয় হুমায়ন। এ নিয়েও পরস্পরের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে দীর্ঘদিন। সর্বশেষ কলেজ শিক্ষক সাইফুল্লাহ’র দায়ের করা দু’টি মামলায় হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে সাজা হয় হুমায়ন কবীরের। ওই রায়ে কোটি টাকার অর্থদন্ডও হয়। সব মিলিয়ে হুমায়ন কবিরের সাথে কলেজ শিক্ষক সাইফুল্লাহ বিরোধ চরমে পৌঁছে।
পরিবারের ধারণা, জমি বিক্রয়ের টাকা আত্নসাৎ, আদালতের অর্থদন্ড মওকুফ সহ সাইফুল্লাহর সহায় সম্পত্তি আত্নসাতের জন্য হুমায়ন কবির চক্র পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করা হয়েছে।
স্ত্রী হোসনেয়ারা পারভীন বলেন, গত সপ্তাহে তার স্বামীর মালিকানাধীন গোপীনাথদিয়া এলাকার জায়গা থেকে হুমায়ন সহ স্থানীয় একটি চক্র গাছ কেটে নেয়। এখবর পেয়ে সেখানে যেয়ে নিষেধ করলে হুমায়ন সহ অন্যরা গালিগালাজ ও ভয়-বীতি প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে “সাইফুল্লাহর মত পরিণতি” হবে বলে প্রকাশ করে হুমায়ন কবীর। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে পরিবারের সদস্যরা সাইফুল্লাহ অপহরণের বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়।
শিক্ষিকা হোসনেয়ারা পারভীন বলেন, রাজবাড়ী থানা মামলা গ্রহণ না করায় আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন ।
অভিযুক্ত হুমায়ন কবিরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।