রাজবাড়ীতে বাক্মে মৌ-মাছির চাষ, মাসে লাখ টাকায় আয়ের আশা
- আপডেট সময় : ১২:৩৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৫২ বার পড়া হয়েছে
বাক্সে মৌ-মাছি চাষ করে মাসে লাখ টাকা আয়ের আশা রাজবাড়ীর মৌ-চাষি মোঃ মাসুদের। পড়াশুনার পাশাপাশি বছরের ৮ মাস ভ্রাম্যমান অবস্থায় জেলার বিভিন্নস্থানে বাক্স বসিয়ে মৌ-চাষ করে মধু আহরণ করেন এই মৌ-চাষি।
মৌ-বাক্স স্থাপনের ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই হারবেষ্ট (মধু সংগ্রহ) করা যায়। মৌসুমের শুরুতে সরিষার মাঠের পাশে সারি বদ্ধ ভাবে মৌ-বাক্স বসিয়ে শুরু হয় মৌ-চাষ। এভাবে দুই মাস ধরে চলে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ। এরপর ধনিয়া, কালোজিরাসহ বিভিন্ন ফসলের মধু আহরণ করে বছরের ৮ মাস অতিবাহিত করেন। মৌ-চাষে নিজেদের থাকা-খাওয়ার খরচ ও মৌ-মাছির পরিচর্যা ছারা তেমন কোন বাড়তি খরচ নাই। ফলে বাক্সে মৌ-চাষ একটি লাভজনক পেশা হিসাবে পরিচিত পেয়েছে। এতে একদিকে যেমন মধু আহরণ করে লাভবান হচ্ছেন মৌ-চাষি, তেমনি ভাবে মৌ-মাছির মাধ্যমে ফসলের পরাগায়ন ঘটায় ফসলের উৎপাদন বেড়ে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। এদিকে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুরে চাষ হয়েছে সরিষার। মাঠে মাঠে হলুদ ফুলের সমারহে প্রকৃতি যেন সেজেছে অপরুপ সাজে। আর অল্প খরচে সরিষা একটি লাভজনক চাষ । ফলে পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে মাঠের পাশেই বসানো হয়েছে বাক্সে মৌ-মাছি চাষ। ভনভন শব্দে বাতাসের সাথে সরিষার মাঠে উড়ছে মৌ-মাছি এবং সরিষা ফুলে বসে আহরণ করছে মধু। এমনি হলুদের সমারহ উপভোগ করতে মাঠে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। অনেকে আবার প্রিয় মুহুর্ত ধারন করছেন মোবাইল ফোনে। এবার রাজবাড়ী সদরের বাগমারা, রামকান্তপুর, গোয়ালন্দসহ বিভিন্নস্থানে সরিষার মাঠের পাশে বাক্সে মৌ-মাছির চাষ থাকায় পরাগায়নের মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভাল পাবার আশা চাষীদের, তেমনি মধু সংগ্রহ করে একটি স্থান থেকে মাসে আয় প্রায় ৯০ হাজার টাকা আশা মৌ-চাষির। রাজবাড়ী একটি কৃষি প্রধান জেলা। এবার জেলার বিভিন্ন এলাকার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে চোখ জুড়ানো সরিষার হলুদ ফুল। খরচের তুলনায় কয়েকগুন লাভজনক এ ভোজ্য তৈল জাতীয় সরিষার চাষ। ফলে দিন দিন রাজবাড়ীতে সরিষার আবাদ বাড়লেও এবছর অতিবৃষ্টির কারণে অর্জন হয় নাই লক্ষমাত্রা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, এবছর জেলায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবদের লক্ষমাত্রা থাকলেও এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে । অতিবৃষ্টি ও পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় এবছর সরিষার আবাদ কিছুটা কসেছে। জেলায় রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে সরিষার আবাদ বেশি হয়ে থাকে।
প্রকৃতি প্রেমী ইমরান খান বলেন, হলুদ দেখতে তার খুব ভাল লাগে। যার কারণে তিনি সহ কয়েকজন রাজবাড়ী শহর থেকে বাগামারা এলাকার সরিষার মাঠে এসেছেন। এখানকার পুরো মাঠে জুরেই এখন সরিষা ফুল মাঠ হলুদ হয়ে গিয়েছে। দেখতে খুব ভাল লাগছে। এখনও অনেক ফুল ফোটা বাকি আছে, আস্তে আস্তে সেগুলোও ফুটবে।
খায়রুল ইসলাম ও খন্দকার বিল্লাল নামে সরিষা চাষী বলেন, মৌ-মাছির কারণে এবার তাদের সরিষার ফলন অনেক ভাল হবে বলে আশা করছেন। গতবছর মৌ-মাছি ছিল না বিধায় ফলনও ভাল হয় নাই। তাদের পুরো মাঠ জুরেই এবার সরিষার চাষ হয়েছে। অনেকে দুর-দুরন্ত থেকে আসে এবং ছবি তোলে। এটা দেখে তাদেরও ভাল লাগে।
আলম মিয়া নামে আরেক চাষী বলেন, মৌ-মাছি থাকায় তাদের অঞ্চলের কৃষদের অনেক উপকার হচ্ছে। এই মৌ-মাছির কারণে সরিষার দানা পুষ্ঠ হবে এবং ভাল ফলন হবে। আগে যেটা হতো না। এবছর সরিষার মাঠের পাশে মৌ-মাছির চাষ হচ্ছে। এতে যেমন তারা উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি মৌ-চাষীরাও উপকৃত হচ্ছে। এরকম প্রতিবছর হলে কৃষকরা উপকৃত হবে। যার কারণে মৌ-চাষির ফোন নম্বর রেখে দিয়েছেন এবং ফসলের সময় তাদের ডেকে আনবেন ফসলের উৎপাদন বাড়াতে।
মৌ-চাষি মোঃ মাসুদ বলেন, সিজনের শুরুতে সরিষা দিয়ে মৌ-চাষ শুরু করেন। এই সরিষার মাঠের পাশে তিনি ফুল থেকে মধু আহরণ করতে ৬২টি মৌ-বাক্স বসিয়েছেন। এই মৌ-মাছির মাধ্যমে তিনি যেমন লাভবান হন, তেমনি কৃষকও লাভবান হন। সরিষার পরিচর্যা ঠিক থাকলে এবং মৌ-মাছি পরাগায়ন ঘটালে ফসলের ২০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই মৌসুমে সরিষার পর পর্যায়ক্রমে সরিষা, ধনিয়া, কালোজিরা এই ভাবে বিভিন্নস্থানে বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে বছরের ৮ মাস চলে মধু আহরণ চলে এবং সরিষা থেকে দুই মাস চলবে মধু আহরণ। তার এই ৬২টি মৌ-বাক্স থেকে প্রতিমাসে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধু আহরণের আশা করছেন। তবে এই মৌ-মাছির পছনে তেমন কোন খরচ নাই। শুধ পরিচর্যা ও দেখাশুনা করতে হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি এই মৌ-চাষ করছেন।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে বছর জেলায় পিছিয়েছে সরিষার চাষ। যার কারণে এবার লক্ষমাত্রার থেকে কিছুটা কম জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে । তবে রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের চাষ বেড়েছে। কৃষি বিভাগ চাষীদের পাশে আছে। এই মৌসুমে মৌ-চাষের মাধ্যমে পরাগায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে মাঠের পাশে মৌ-চাষিরা মৌ-বক্স বসিয়েছে।