9:57 am, Monday, 21 April 2025

রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর আদালতে আত্নসমর্পণ

আদালতের আদেশ অমান্য করার ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদকে আপীলের শর্তে জামিন দিয়েছে আদালত। বুধবার রাজবাড়ীর দ্রুত বিচার আদালতে আত্নসমর্পণ করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুমন হোসেন আপীলের শর্তে জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট রাজবাড়ীর দ্রুত বিচার আদালতে ২০০২ সালের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন এর ৪ ও ৫ ধারায় মোঃ দিলু মিয়ার দায়েরকৃত (দ্রুত বিচার-৯/২৪) মামলা তদন্তের জন্য রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের ৩ টি ধার্য্য তারিখ অতিক্রান্ত হওয়ার  পরও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় গত ৩ অক্টোবর আদালত ওই নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তাগিদ প্রদান করেন। আদালতের তাগিদ প্রাপ্তির পরও নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে তদন্ত না করে অধীনস্থ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাসান মাহফুজ ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (চঃদাঃ) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে গত ৯ অক্টোবর আদালতে একটি দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
উল্লেখিত বিষয়ে আদালত উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীকে ২০ নভেম্বর সকাল ১১ টায় আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। উল্লেখিত নির্দেশ প্রতিপালন না করে উপরন্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আদালত প্রসঙ্গে অশোভন মন্তব্য সম্বলিত একটি পত্র রাজবাড়ীর বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে রাজবাড়ীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক মোঃ সুমন হোসেন অভিযুক্ত রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদ এর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আদালতের স্বাধীন বিচারিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হাজির না হওয়া এবং আদালতের প্রতি অবজ্ঞা,অশ্রদ্ধা ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন সহ দায়সারা গোছের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বিচার প্রার্থীকে হয়রানী ও ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে অন্তরায় সৃষ্টির কারণে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৫ ধারায় উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। একই সাথে সাজাপ্রাপ্ত উক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার আদেশ প্রদান করেন।
এদিকে আদালতের সাজা পরোয়ানা আদেশের পর গ্রেফতার এড়াতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে আত্নগোপনে থাকেন দন্ডপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদ। বুধবার আদালতে উপস্থিত হয়ে উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, তিনি আদালতের কার্যক্রম ও পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকায় অজ্ঞতাবশতঃ এরুপ ভুল করেছেন। নিজের এরুপ আচরণের জন্য তিনি প্রকাশ্য আদালতে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। একই সাথে ভবিষ্যতে আদালতের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন কোন আচরণ করবেন না মর্মে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
আদালতে বিচারক মোঃ সুমন হোসেন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর বক্তব্য এবং আসামী পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আগামী ৭ জানুয়ারীর মধ্যে উচ্চ আদালতে আপীল দায়েরের স্বার্থে ৫হাজার টাকার বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন। আসামী পক্ষে রাজবাড়ী জেলা বারের সভাপতি এ্যাড. খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু ও মাসুদুল আলম মামলা পরিচালনা করেন। এসময় জনাকীর্ণ আদালতে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)  ৩২ ব্যাচের কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদ গত ২ জুন রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় গত ২৪ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের রিজার্ভ অফিসে বদলীর করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

‘মানুষ একটা ভাল নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় আছে’ -আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম

রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর আদালতে আত্নসমর্পণ

Update Time : 11:39:20 am, Wednesday, 27 November 2024

আদালতের আদেশ অমান্য করার ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদকে আপীলের শর্তে জামিন দিয়েছে আদালত। বুধবার রাজবাড়ীর দ্রুত বিচার আদালতে আত্নসমর্পণ করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুমন হোসেন আপীলের শর্তে জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট রাজবাড়ীর দ্রুত বিচার আদালতে ২০০২ সালের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন এর ৪ ও ৫ ধারায় মোঃ দিলু মিয়ার দায়েরকৃত (দ্রুত বিচার-৯/২৪) মামলা তদন্তের জন্য রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের ৩ টি ধার্য্য তারিখ অতিক্রান্ত হওয়ার  পরও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় গত ৩ অক্টোবর আদালত ওই নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তাগিদ প্রদান করেন। আদালতের তাগিদ প্রাপ্তির পরও নির্বাহী প্রকৌশলী নিজে তদন্ত না করে অধীনস্থ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাসান মাহফুজ ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (চঃদাঃ) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে গত ৯ অক্টোবর আদালতে একটি দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
উল্লেখিত বিষয়ে আদালত উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীকে ২০ নভেম্বর সকাল ১১ টায় আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। উল্লেখিত নির্দেশ প্রতিপালন না করে উপরন্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আদালত প্রসঙ্গে অশোভন মন্তব্য সম্বলিত একটি পত্র রাজবাড়ীর বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে রাজবাড়ীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক মোঃ সুমন হোসেন অভিযুক্ত রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদ এর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আদালতের স্বাধীন বিচারিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হাজির না হওয়া এবং আদালতের প্রতি অবজ্ঞা,অশ্রদ্ধা ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন সহ দায়সারা গোছের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বিচার প্রার্থীকে হয়রানী ও ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে অন্তরায় সৃষ্টির কারণে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৫ ধারায় উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। একই সাথে সাজাপ্রাপ্ত উক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার আদেশ প্রদান করেন।
এদিকে আদালতের সাজা পরোয়ানা আদেশের পর গ্রেফতার এড়াতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে আত্নগোপনে থাকেন দন্ডপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদ। বুধবার আদালতে উপস্থিত হয়ে উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, তিনি আদালতের কার্যক্রম ও পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকায় অজ্ঞতাবশতঃ এরুপ ভুল করেছেন। নিজের এরুপ আচরণের জন্য তিনি প্রকাশ্য আদালতে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। একই সাথে ভবিষ্যতে আদালতের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন কোন আচরণ করবেন না মর্মে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
আদালতে বিচারক মোঃ সুমন হোসেন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর বক্তব্য এবং আসামী পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আগামী ৭ জানুয়ারীর মধ্যে উচ্চ আদালতে আপীল দায়েরের স্বার্থে ৫হাজার টাকার বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন। আসামী পক্ষে রাজবাড়ী জেলা বারের সভাপতি এ্যাড. খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু ও মাসুদুল আলম মামলা পরিচালনা করেন। এসময় জনাকীর্ণ আদালতে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)  ৩২ ব্যাচের কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদ গত ২ জুন রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় গত ২৪ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এম ইফতেখার মজিদকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের রিজার্ভ অফিসে বদলীর করা হয়েছে।