ঢাকা ০২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢিলেঢালা অভিযান ॥ পদ্মায় মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥
  • আপডেট সময় : ১২:২৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৩১ বার পড়া হয়েছে

সারা দেশে চলছে মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান। বন্ধ রয়েছে ইলিশ ধরা। তবে পদ্মাপাড়ের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জেলেরা উৎসবের আমেজে মা ইলিশ শিকার করছেন। মা ইলিশ বিক্রির জন্য পদ্মা পাড়ে বসেছে অস্থায়ী বাজার। মৎস্য বিভাগের তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় প্রকাশ্যেই চলছে দেশের জাতয়ি মাছ ইলিশ ধ্বংসের মহোৎসব।
গত মঙ্গলবার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চরকর্ণেশন কলা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা পাড়ের নারী পুরুষ সবাই মিলে ইলিশ শিকারের জাল মেরামত করছেন। অপরদিকে পদ্মায় শত শত জেলে নৌকা মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছেন। কেউ আবার ইলিশ শিকার করে ফিরে আসছেন। নৌকা থেকে জাল নামিয়ে তাজা ইলিশ আলাদা করতে ব্যস্ত অনেকেই। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মা ইলিশ বেচা-কেনার জন্য এই কলাবাগান এলাকায় বসেছে অস্থায়ী বাজার। সেখানেই মহা ধুমধামে কেনাবেচা চলছে মা ইলিশ। জেলেদের খাবারের জন্য এখানেই বসেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান। ইলিশ মাছ কিনতে নারী-পুরুষ অনেকেই এখানে ভীর করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানের সময় ইলিশ ধরা নিয়ে জেলেরা দিচ্ছে নানা যুক্তি। তারা বলছেন, পদ্মা নদীর এই এলাকায় সারা বছর খুবই কম ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। শুধু এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পরে। কেউ কেউ বলেন, ‘এই ইলিশ যদি আমরা এখন নাও ধরি, তবুও এ সকল ইলিশ পদ্মা নদীতে থাকবে না। এগুলো ভারতে চলে যাবে। তাই তারা এ ভাবে ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করছেন।
নাম প্রকাশ না করে আরেক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ভাটি অঞ্চলে অভিযানের কারণে জেলেরা স্বাভাবিক ভাবে নদীতে নামতে পারে না, তাই এ এলাকায় প্রচুর পরিমান ডিম ওয়ালা ইলিশ চলে আসে। যা বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না। এসময় মা ইলিশ নিকতে আসা অনেকেই বলেন এভাবে ডিম ওয়ালা ইলিশ শিকার করলে একটা সময় নদীতে আর ইলিশের দেখা মিলবে না। তারপরও তারা কেন ইলিম কিনতে এসেছেন? জানতে চাইলে তারা বলেন, সারা বছর ইলিশের যে দাম তাতে তাদের কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই ইলিশের স্বাদ নিতে একটু কম টাকায় বাধ্য হয়ে ইলিশ মাছ কিনছেন।
আলাপকালে অসংখ্য জেলে অভিযোগ করে বলেন, পদ্মা নদীতে হাজার হাজার জেলে মাছ শিকার করলেও বেশীর ভাগ জেলেই নিশেধাজ্ঞাকালী সরকারী অনুদান পান না। যারা জেলে না, অন্য পেশায় আছেন, তারাই বিভিন্ন উপায়ে জেলে তালিকায় নাম দিয়ে অনুদান পেয়ে থাকেন। আর যারা প্রকৃত জেলে তারা কোন সরকারী সহায়তা পান না।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমরান মাহমুদ তুহিন জানান, পদ্মা নদীর ৬৫ কিলোমিটার বিশাল এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রতিনিয়ত অভিযান চললেও তারা যে দিকে যান, অপর দিকে জেলেরা মা ইলিশ শিকার শুরু করে দেন। তাদের ব্যবহৃত স্পীডবোডটিও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই তারা বধ্য হয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে অভিযান করে থাকেন। এ সকল ট্রলারের গতি জেলেদের নৌকার চাইতে কম। কারণ জেলেদের ছোট নৌকায় বড় ইঞ্জিন ব্যবহার করে। অপরদিকে বর্তমানে জেলেরাও চরম মারমুখী। অনেক কিছু বিবেচনা করে তাদের অভিযানে যেতে হয়। তাদের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে মা ইলিশ রক্ষায় তারা সর্বত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা আল রাজীব জানান, সার্বক্ষনিক মা ইলিশ রক্ষার জন্য অভিযান পরিচালনার করতে যে পরিমান লোকবল ও নৌযান প্রয়োজন সে গুলো মৎস্য বিভাগের নেই। এই সুযোগে জেলেরা বেপরোয়া হয়ে মা ইলিশ শিকার করছে। মা ইলিশ রক্ষায় জেলেদের প্রনোদনা বাবাদ ৪ হাজার ৬শ ৯০ জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এছাড়া মা ইলিশ ধরার অপরাধে ২৮ জেলেকে জেল ও তিন লক্ষ ২০ মিটার জাল ধ্বংস করা হয়েছে।

ট্যাগস : Rajbaribd.com

নিউজটি শেয়ার করুন

ঢিলেঢালা অভিযান ॥ পদ্মায় মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব

আপডেট সময় : ১২:২৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

সারা দেশে চলছে মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান। বন্ধ রয়েছে ইলিশ ধরা। তবে পদ্মাপাড়ের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জেলেরা উৎসবের আমেজে মা ইলিশ শিকার করছেন। মা ইলিশ বিক্রির জন্য পদ্মা পাড়ে বসেছে অস্থায়ী বাজার। মৎস্য বিভাগের তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় প্রকাশ্যেই চলছে দেশের জাতয়ি মাছ ইলিশ ধ্বংসের মহোৎসব।
গত মঙ্গলবার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চরকর্ণেশন কলা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা পাড়ের নারী পুরুষ সবাই মিলে ইলিশ শিকারের জাল মেরামত করছেন। অপরদিকে পদ্মায় শত শত জেলে নৌকা মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছেন। কেউ আবার ইলিশ শিকার করে ফিরে আসছেন। নৌকা থেকে জাল নামিয়ে তাজা ইলিশ আলাদা করতে ব্যস্ত অনেকেই। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মা ইলিশ বেচা-কেনার জন্য এই কলাবাগান এলাকায় বসেছে অস্থায়ী বাজার। সেখানেই মহা ধুমধামে কেনাবেচা চলছে মা ইলিশ। জেলেদের খাবারের জন্য এখানেই বসেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান। ইলিশ মাছ কিনতে নারী-পুরুষ অনেকেই এখানে ভীর করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানের সময় ইলিশ ধরা নিয়ে জেলেরা দিচ্ছে নানা যুক্তি। তারা বলছেন, পদ্মা নদীর এই এলাকায় সারা বছর খুবই কম ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। শুধু এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পরে। কেউ কেউ বলেন, ‘এই ইলিশ যদি আমরা এখন নাও ধরি, তবুও এ সকল ইলিশ পদ্মা নদীতে থাকবে না। এগুলো ভারতে চলে যাবে। তাই তারা এ ভাবে ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করছেন।
নাম প্রকাশ না করে আরেক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ভাটি অঞ্চলে অভিযানের কারণে জেলেরা স্বাভাবিক ভাবে নদীতে নামতে পারে না, তাই এ এলাকায় প্রচুর পরিমান ডিম ওয়ালা ইলিশ চলে আসে। যা বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না। এসময় মা ইলিশ নিকতে আসা অনেকেই বলেন এভাবে ডিম ওয়ালা ইলিশ শিকার করলে একটা সময় নদীতে আর ইলিশের দেখা মিলবে না। তারপরও তারা কেন ইলিম কিনতে এসেছেন? জানতে চাইলে তারা বলেন, সারা বছর ইলিশের যে দাম তাতে তাদের কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই ইলিশের স্বাদ নিতে একটু কম টাকায় বাধ্য হয়ে ইলিশ মাছ কিনছেন।
আলাপকালে অসংখ্য জেলে অভিযোগ করে বলেন, পদ্মা নদীতে হাজার হাজার জেলে মাছ শিকার করলেও বেশীর ভাগ জেলেই নিশেধাজ্ঞাকালী সরকারী অনুদান পান না। যারা জেলে না, অন্য পেশায় আছেন, তারাই বিভিন্ন উপায়ে জেলে তালিকায় নাম দিয়ে অনুদান পেয়ে থাকেন। আর যারা প্রকৃত জেলে তারা কোন সরকারী সহায়তা পান না।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমরান মাহমুদ তুহিন জানান, পদ্মা নদীর ৬৫ কিলোমিটার বিশাল এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রতিনিয়ত অভিযান চললেও তারা যে দিকে যান, অপর দিকে জেলেরা মা ইলিশ শিকার শুরু করে দেন। তাদের ব্যবহৃত স্পীডবোডটিও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই তারা বধ্য হয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে অভিযান করে থাকেন। এ সকল ট্রলারের গতি জেলেদের নৌকার চাইতে কম। কারণ জেলেদের ছোট নৌকায় বড় ইঞ্জিন ব্যবহার করে। অপরদিকে বর্তমানে জেলেরাও চরম মারমুখী। অনেক কিছু বিবেচনা করে তাদের অভিযানে যেতে হয়। তাদের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে মা ইলিশ রক্ষায় তারা সর্বত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা আল রাজীব জানান, সার্বক্ষনিক মা ইলিশ রক্ষার জন্য অভিযান পরিচালনার করতে যে পরিমান লোকবল ও নৌযান প্রয়োজন সে গুলো মৎস্য বিভাগের নেই। এই সুযোগে জেলেরা বেপরোয়া হয়ে মা ইলিশ শিকার করছে। মা ইলিশ রক্ষায় জেলেদের প্রনোদনা বাবাদ ৪ হাজার ৬শ ৯০ জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এছাড়া মা ইলিশ ধরার অপরাধে ২৮ জেলেকে জেল ও তিন লক্ষ ২০ মিটার জাল ধ্বংস করা হয়েছে।