পাংশায় ব্লাকমেইল করে স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে!
- আপডেট সময় : ০১:২৬:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
- / ১৪১ বার পড়া হয়েছে
রাজবাড়ীর পাংশায় ব্লাকমেইল করে আপন সম্বন্ধীর মেয়েকে বিয়ে করার দাবী তুলেছে এক ইউপি সদস্য। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের কানুখালী গ্রামে। বিয়ের দাবী তোলা ওই ইউপি সদস্যের নাম মো: হারুন অর রশিদ। সে মাছপাড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য।
হারুন মেম্বার এলাকায় মাদকের গডফাদার হিসাবে পরিচিত, আওয়ামী লীগের প্রভাবে তিনি মাদকের স্বর্গ রাজ্যে পরিনিত করেছিলেন। ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার ওই তরুণী ২০২৪ সালে মাছপাড়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে অসুস্থ সম্বন্ধী বউয়ের চিকিৎসা কাজে সহযোগিতাসহ পরিবারের নানা কাজের দায়িত্ব পালন করার জন্য ওই বাড়িতে অবস্থান নেয় ইউপি সদস্য হারুন। সম্বন্ধীর মেয়ে ছোট হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতেও যায়। এর আগে নিজ দায়িত্বে মেয়েটির অমতে একাধিকবার বিবাহও দেয় সে। মেয়েটি সেখানে সংসার করতে না চাইলে নিজের ক্ষমতাবলে সেখান থেকে ছাড়িয়ে আনে এবং কাবিননামার অর্থ আদায় করে নিজেই আত্মসাৎ করেছে। সম্প্রতি ওই তরুণীর অন্যত্র বিয়ে হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই তরুণী তার বিবাহ করা বউ বলে দাবী করছে ইউপি সদস্য হারুন।
এ ব্যাপারে ওই তরুণীর মা বলেন, কয়েক বছর আগে আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত হই। আমার দুইটি কন্যা সন্তান, কোন পুত্র সন্তান নেই। আমার অসুস্থতার সময় আমার ননদের জামাই হারুন আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। ঢাকাতে আমার সাথে থেকে চিকিৎসা কাজে সহযোগিতা করে। পরবর্তীতে সে বলে ভাবী আপনার দেখাশোনা করার মতো কোন লোক নাই তাই আপনার কোন সমস্যা না থাকলে আজ থেকে আমি আপনার বাড়িতেই থাকতে চায়। আমি সরল মনে তাকে থাকতে দিই। এরপর আমার ছোট মেয়ের বয়স না হওয়া সত্বেও বিয়ের জন্য ছেলে দেখতে থাকে। আমি বলি মেয়ের তো বয়স হয় নাই, কোন সমস্যা হবে না? সে বলে আমি এলাকার মেম্বার সবকিছু আমি দেখবো। কোন সমস্যা নাই। পরবর্তীতে ছেলে না দেখিয়ে আমার নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেয়। ছেলে পছন্দ না হওয়ায় আমার মেয়ে সেখানে সংসার করতে রাজি না থাকায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে প্রবাসী আরেকটি ছেলের ছবি দেখিয়ে তার সাথে মেয়েকে বিয়ে দেয়। কিন্তু ছবির সাথে তার কোন মিল না থাকায় সেখানেও সংসার হয়নি। সেখান থেকে হারুন মেম্বার নিজ ক্ষমতাবলে কাবিনের টাকা আদায় পূর্বক ডিভোর্স দেয়। কিন্তু কাবিনের টাকা আমরা পাইনি।
হারুন মেম্বার আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন কিছু বলতে গেলে সে আমাদের উপর নানা নির্যাতন চালায়। এরপর হঠাৎ একদিন একটি অপরিচিত ছেলেকে নিয়ে এসে আমাকে বলে ভাবী ছেলেটি খুব বিপদে পড়েছে তাকে এখানে কয়েকদিনের জন্য থাকতে দিন। তখন সে আমার বাড়ির একটি রুমে তাকে তালাবদ্ধ করে রেখে দেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি ছেলেটি ইয়াবা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত এবং সে নিজেও ইয়াবা সেবন করে। ছেলেটির সাথে আমার মেয়ের সখ্যতা গড়ে উঠলে হারুন ইয়াবাসহ ডিবি দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেয়। হারুন নিজেও মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিলো। ওর অত্যাচার, নির্যাতনে আমরা অতিষ্ঠ। এর থেকে আমরা মুক্তি চাই।
ব্লাকমেইলের শিকার ওই তরুণী বলেন, হারুন মেম্বার আমার আপন ফুফা। আমার ফুফার কারণে আমি কোথাও সংসার করতে পারিনি। তাই সে একদিন বলে, তোর ভবিষ্যত আমি গড়ে দেবো। তোর কাবিনের টাকা পয়সা সব তোরই থাকবে। হঠাৎ একদিন আমার ভবিষ্যত নিরাপত্তার কথা বলে সাদা তিনটি স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেয়। একদিন সে আমার বয়সে ছোট ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের কথাও বলে। কিন্তু আমি বলি ও আমার ছোট ভাই আমি ও কে বিয়ে করতে পারবো না।
তারপর গত ১০ অক্টোবর আমার অন্যত্র বিয়ে হলে আমি শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। বিয়ের পর থেকে সে আমার ফোনে বারবার কল দিতে থাকে। আমি তাকে কল দিতে নিষেধ করলে সে আমাকে নানা হুমকি দেয়। সে বলে আমি তোকে সংসার করতে দিবো না, তুই আমার বিয়ে করা বউ। তখন আমি চমকে উঠি। সে আমার ফুফা, আমি তার বউ হলাম কি করে! সে বলে তুই বাড়ি না আসলে তোর শ্বশুর বাড়ির লোককে সব বলে দেবো। আমি বাড়ি আসলে সে আমার বর্তমান স্বামীকে ডেকে এনে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সারাদিন আটকে রাখে এবং তার কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করে।
আমার কোন ভাই না থাকায় সে আমাদের সম্পত্তির লোভে তার ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চায়। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় সে নিজেই এখন আমাকে বউ দাবী করছে। যা খুবই লজ্জাজনক। সে এখন সাদা স্ট্যাম্পে আমার দেয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করে উকিলের মাধ্যমে কোর্টে আমাদের বিয়ে হয়েছে বলে দাবী করছে। যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সে এখন আমার কাছ থেকে ডিভোর্স চায়। আমি কোনদিন তাকে বিয়েই করিনি। তাহলে ডিভোর্স দিতে হবে কেন? সে আমাকে ব্লাকমেইল করছে। আমি এই হারুন মেম্বারের হাত থেকে বাঁচতে চাই, আমার নতুন সংসারে ফিরে যেতে চাই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত হারুন মেম্বার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি জোরপূর্বক কোনকিছু করিনি। ওদের বাড়িতে থাকার সুবাদে আমাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেয়। ওরা লোভী। এর আগেও ওই মেয়ের একাধিক বিয়ে হয়েছিল। আমাকে ডিভোর্স দিলে আর কোন দাবী নাই।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। লিখিত অভিযোগের বিষয়ে পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের নিকট থেকে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে সুষ্ঠু সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি। তবে বিবাহের বিষয়ে উভয় পক্ষের সাক্ষী না থাকলে তা বৈধ হবে না। এ বিষয়ে অভিযুক্ত হারুন মেম্বার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোন ঝামেলা করলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শপূর্বক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।