রাজবাড়ীতে বিএডিসির নিন্মমানের পেঁয়াজ বীজ সরবরাহের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান
- আপডেট সময় : ১১:৫৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৬ বার পড়া হয়েছে
রাজবাড়ীতে বিএডিসির নিন্মমানের পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করায় বপন করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চার হাজার কৃষক। কৃষকদেরকে পূনর্বাসনের দাবীতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
বুধবার (৪ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী জেলা জাতীয় কৃষক সমিতি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জ্যোতি শংকর ঝন্টু, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির উপদেষ্টা আঃ সালাম মিয়া, জাতীয় কৃষক সমিতির রাজবাড়ী শাখার সভাপতি ছলেমান আলী দুলু, সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার সরকার প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, রাজবাড়ী কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র কাছ থেকে এক কোটি আট লক্ষ টাকার পেঁয়াজের বীজ কিনে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে জেলা কৃষি বিভাগ। এসব বীজ বপনের পর অংকুরোদ্গম না হওয়ায় কৃষকের চরম ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষকের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে বীজ এর কারণে এ জেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৭.৮-৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হ্রাস পাবে। রাজবাড়ী জেলায় চার হাজার কৃষকের মাঝে এবার বীজ বিতরণ করা হয়েছে। সারাদেশের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে রাজবাড়ী তৃতীয় স্থানে । বিএডিসি’র সরবরাহকৃত নিন্মমানের পেঁয়াজ বীজ বপন করে কৃষকের চরম ক্ষতি হয়েছে । মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার নিকট কৃষকদের ক্ষতি পুরণের দাবীতে স্বারকলিপি দেন জাতীয় কৃষক সমিতি।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজবাড়ী জেলা পেঁয়াজ উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে আবার সারা দেশের উৎপাদিৎ পেয়াজের শতকরা ১৪ ভাগ যোগান দেয় এই জেলা থেকেই। গত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এ জেলার ৫ উপজেলায় রবি প্রণোদনা হিসাবে ৪ হাজার কৃষকের মাঝে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বিএডিসির সরবরাহকৃত পেঁয়াজ বীজ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে রাজবাড়ী জেলা সদর উপজেলায় ৮০০ জন, পাংশায় ১০০০জন, কালুখালীতে ৮০০ জন, বালিয়াকান্দিতে ১০০০ জন ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪০০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। বিএডিসিকে বীজ বাবদ ১ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে কৃষি বিভাগ। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলার ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ী জেলা পেঁয়াজের জন্য বিখ্যাত। এ বছর রাজবাড়ীতে ৪ হাজার কৃষককে প্রনোদনা হিসেবে বীজ প্রদান করা হয়েছে। যে বীজগুলো প্রদান করা হয়েছে তা বিএডিসি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে ছিলো। পেঁয়াজ রোপনের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা মোটেও সন্তোশজনক নয়। আমরা বিএসডিসিকে পরামর্শ দিয়েছি কৃষকে ক্ষতি পুরণ দেয়ার জন্য। এ বছর রাজবাড়ী জেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বীজের এ ক্ষতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে হালি পেঁয়াজ বাজারে আসবে না। অন্তত আরো এক মাস উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে স্বীকার করেন তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ( বিএডিসি’র ) রাজবাড়ীর উপ পরিচালক সৈয়দ কামরুল হক বলেন, পেঁয়াজ বীজ না গজানোর বিষয়টি দুঃখজনক। কৃষক ও তদন্ত কমিটির রির্পোটের ভিত্তিতে সেম্পল সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে। সরকারীভাবে পেঁয়াজ বীজের এমন দুর্শশা ও উৎপাদন ব্যাহত তবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে না। বীজতলা নষ্ট হয়েছে ক্ষেত তো নষ্ট হয়নি। কৃষক অন্য জেলা থেকে বীজ কিনে আবার রোপন করতে পারবে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, রাজবাড়ী যেহেতু পেঁয়াজ উৎপাদনে সারাদেশে সুনাম আনে এবং দেশের ঘাটতি পুরণে ভুমিকা রাখে তাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। বিএডিসি কোন পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়া এ বীজ কৃষি বিভাগকে প্রদান করলো যা কাজে গাফিলতির সামিল। এ কাজে আমরা হতাশ হই। যা আমাদের কাম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে সভা করা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে আজই সচিব ও চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। সেই সাথে বিএডিসিকে বলা হয়েছে তাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কৃষকের পাশে দাড়ানোর জন্য।