কুকুরের তাড়া খেয়ে কুকুরের মালিক সন্দেহে ভ্যানচালককে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে
- আপডেট সময় : ১২:৫৬:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ২৬৭ বার পড়া হয়েছে
শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে কুকুরের তাড়া খেয়ে ওই কুকুরের মালিক সন্দেহে এক ভ্যানচালককে নিজের খাস কামড়ায় ডেকে হাত বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ সুত্রে জানা যায়।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন নির্যাতনের শিকার ভ্যানচালক আফজাল খাঁ (৩০)। আফজাল খাঁ রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের মৃত আনছের খাঁ’র ছেলে। আফজাল খাঁ বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
থানার ওসি বরাবর আফজাল খাঁ’র দায়ের করা এজাহারের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এজাহারে আফজাল খাঁ উল্লেখ করেছেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট সুমন হোসেনের শশুরবাড়ি আমাদের গ্রামে হওয়ায় হওয়ায় তিনি মাঝেমধ্যে তার শশুরবাড়িতে আসেন। গত ৩০ জানুয়ারি তিনি তার পরিবার নিয়ে শশুরবাড়ির এলাকায় হাটাচলা করা অবস্থায় একটি বেওয়ারিশ কুকুর তাকে ধাওয়া করে। তিনি পরবর্তীতে ওই বেওয়ারিশ কুকুরের মালিকের খোঁজ করলে অজ্ঞাত ব্যক্তি কুকুরটি আমার বলে তাকে জানায়। পরে তিনি থানা পুলিশের মাধ্যমে আমাকে তার সেরেস্তায় ডেকে পাঠান। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে আমি ও আমার মেঝ ভাই মো. সাহেব আলী খান জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় তার চেম্বারে গেলে তিনি আমাকে ওই কুকুরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমি তাকে বলি, কুকুরটি আমার না এবং কুকুরটি কার তাও আমি জানি না। তখন তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার সেরেস্তায় থাকা একটি দড়ি দিয়ে আমার হাত পিঠমোড়া করে বাঁধেন এবং আমাকে একটি চেয়ারের উপর হামু দিতে বলেন। আমি তার কথা মতো চেয়ারের উপরে হামু দিলে তিনি একটি কাঠের রুল দিয়ে আমার পশ্চাৎদেশসহ পিঠে আনুমানিক ৩০ টি আঘাত করেন। এতে আমার পশ্চাৎদেশসহ পিঠে রক্তজমাট নিলাফুলা ব্যথাযুক্ত জখম হয়। তখন সুমন হোসেন বলেন যে, ওই কুকুরটি যদি এলাকায় আবার দেখা যায় এবং আমি যদি এই বিষয় নিয়ে কাউকে জানাই তবে তিনি আমার নামে মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটাবেন। পরে আমার ভাই আমাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
হাসপাতলে চিকিৎসাধীন আফজাল খাঁ বলেন,আমি গরীব মানুষ। কখনো ভ্যান চালাই আবার কখনো শ্রমিকের কাজ করি। আমার বাড়ি থেকে সুমন স্যারের শশুর বাড়ী আধা কিলোমিটার দুরে। তার স্ত্রীও আমাকে চেনে। প্রথমে আমার বাড়ি থেকে পুলিশ গিয়ে আমাকে দেখা করতে বলে। শনিবার দুপুরে আমি থানায় আসি। থানা থেকে পুলিশ জানাই সুমন স্যার আমাকে দেখা করতে বলেছে। তখন আমি এলাকার জামাই হিসেবে তার বাসায় যায়। বাসার দরজা খুলেই আমাকে গালাগালি করে বলে বিকেল চারটায় আদালতে আয়। আদালতে গেলে তার খাস কামড়ায় ডেকে আমার হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে পিটিয়েছে। এ ঘটনায় আমি সদর থানায় এজাহার দায়ের করেছি। আমি বিচার চাই। তার কাছ থেকে মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। কিন্তু সে এমন করলে মানুষ যাবে কোথায়।
আফজাল খাঁ’র ভাই মো. সাহেব আলী খান বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজবাড়ী সদর থানার এসআই আসাদ আমার ভাই আফজালকে খুঁজতে আমাদের বাড়িতে যান। তবে সেসময় আফজাল বাড়িতে ছিলোনা। শনিবার সকালে আমি আমার ভাইকে সাথে নিয়ে থানায় এসআই আসাদের কাছে গিয়ে আমার ভাইকে খোঁজার বিষয়ে জানতে চাই। তখন এসআই আসাদ বলেন ম্যাজিস্ট্রেট সুমন স্যার তাকে পাঠিয়েছিলেন। সুমন স্যারের বাসা হয়ে আদালতে তার চেম্বারে গেলে প্রায় দুই ঘন্টা পর আমার ভাই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে বাইরে বের হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। এসময় আমি আমার ভাইকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা জন্য ভর্তি করি। পরে থানায় গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করি। এঘটনায় ন্যায় বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের মোবাইলে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান তাকে মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। তাহলে আপনার বিরুদ্ধে একজন ভ্যানচালক কেন অভিযোগ করবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, রোববার সকালে আমার অফিসে আসেন। সরাসরি বিস্তারিত জানাবো। রোববার আদালতে গিয়ে তার ফোনে কল দিলেও ধরেনি আবার মেসেজ করলেও কোন উত্তর দেয়নি।
বিষয়টি নিয়ে রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাড. হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমি বিষয়টি দেখেছি। ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে খুবই দুঃখ জনক। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্য উদঘাটন করবে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন বলেন, একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটা অভিযোগ জমা পড়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।