ঢাকা ০৯:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালুখালীতে কৃষক মঙ্গল হত্যার পরিকল্পনাকারী ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

কামাল হোসেন ॥
  • আপডেট সময় : ০১:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী রাজবাড়ীর কালুখালীতে মঙ্গল চন্দ্র হত্যার ঘটনার পরিকল্পনাকারী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার বিকেলে কালুখালী উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে তাকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুর রহমান।
মামলা সুত্রে জানাগেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের যতীন্দ্রনাথের ছেলে মঙ্গল চন্দ্র (৬৫) বাড়ীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢুকে দুই পা ও একটি হাত ভেঙ্গে দেয়। এসময় তার বাড়ী ঘর তছনছ করাসহ ঘরে থাকা গরু ব্যবসার ২ লক্ষ ৯৩ হাজার নগদ টাকা, একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও ৩টি মোবাইল ফোন লুটপাট করে নিয়ে যায়। চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনায় তার ছোট ছেলে কুমারেশ কুমার বাদী হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে কালুখালী থানায় বিপুল প্রামানিক, মোঃ গফুর, রফিক মন্ডল, মুকিম মন্ডল, আকিদুল মন্ডল ও মোঃ আলীসহ ৬জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ৫-৬জন উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় পুলিশ রফিক মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। গত ১৪ মার্চ রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ ইকবাল হোসেনের নিকট ১৬৪ ধারায় কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের মৃত কিন্দার মন্ডলের ছেলে মঙ্গল চন্দ্র হত্যা মামলার এজহার নামীয় ৩ নং আসামী রফিক মন্ডল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১জন মিলে হত্যা করে।
স্বীকারোক্তিতে রফিক মন্ডল বলেন, তিনি খেঁজুর গাছ কাটেন। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যানের লোক। গত ২০ বছর ধরে বিপুল ও মঙ্গলের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান সহ গফুর, মুকিম, আকিদুল, আলী বিরোধ মেটানোর জন্য বহু চেষ্ঠা করেছেন। প্রতিবার চেয়ারম্যানের ডাকের তোয়াক্কা করতো না মঙ্গল মন্ডল। এ জন্য ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তাদের ১১ জনকে বলে যে, মঙ্গলকে শায়েস্তা করতে হবে। আবারো তিনি বলেন, তিনি ভারতে যাওয়ার পর ১১ জন মিলে মঙ্গল চন্দ্রকে মেরে হাত, পা ভেঙ্গে দিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিক, বিপুল, গফুর, মুকিম, আকিদুল, মোঃ আলী, শাওন, মিলন, উজ্জল, সোহেল ও অজ্ঞাত ১জন মিলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত দেড় টার দিকে মঙ্গল চন্দ্র মন্ডলের বাসায় যান। এসময় শাওনের হাতে পিস্তল ছিলো, রফিকের হাতে চিকুন রড, মিলনের হাতে চাইনিজ কুড়াল, বিপুলের হাতে হকিস্টিক, অন্য সবার হাতে লাঠিসোটা ছিল। শাওন, মিলন ও বিপুল বেশী মারে। অন্য সবাই এলোপাতারি ভাবে মারে। মঙ্গলের ২ পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়, কিন্তু ঘটনাস্থলে মারা যায়নি। পরে শুনেছি মঙ্গল মারা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন শহিদুল ইসলাম আলী ও তার সহযোগিরা বলে শুনেছি। আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তার কথা না শুনলে নির্যাতন করে আসছেন। এ নিয়ে ইতিপূর্বে মামলার শিকার হন। সাধারণ মানুষ এ থেকে মুক্তি চান।
কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুর রহমান বলেন, এ মামলার এজাহার নামীয় আসামীরা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। আদালতে আসামীরা ১৬৪ ধারায় উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীর নাম বলেছে। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করার কার্যক্রম চলছে।

ট্যাগস : Rajbaribd.com

নিউজটি শেয়ার করুন

কালুখালীতে কৃষক মঙ্গল হত্যার পরিকল্পনাকারী ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

আপডেট সময় : ০১:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী রাজবাড়ীর কালুখালীতে মঙ্গল চন্দ্র হত্যার ঘটনার পরিকল্পনাকারী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার বিকেলে কালুখালী উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে তাকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুর রহমান।
মামলা সুত্রে জানাগেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের যতীন্দ্রনাথের ছেলে মঙ্গল চন্দ্র (৬৫) বাড়ীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢুকে দুই পা ও একটি হাত ভেঙ্গে দেয়। এসময় তার বাড়ী ঘর তছনছ করাসহ ঘরে থাকা গরু ব্যবসার ২ লক্ষ ৯৩ হাজার নগদ টাকা, একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও ৩টি মোবাইল ফোন লুটপাট করে নিয়ে যায়। চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনায় তার ছোট ছেলে কুমারেশ কুমার বাদী হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে কালুখালী থানায় বিপুল প্রামানিক, মোঃ গফুর, রফিক মন্ডল, মুকিম মন্ডল, আকিদুল মন্ডল ও মোঃ আলীসহ ৬জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ৫-৬জন উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় পুলিশ রফিক মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। গত ১৪ মার্চ রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ ইকবাল হোসেনের নিকট ১৬৪ ধারায় কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের মৃত কিন্দার মন্ডলের ছেলে মঙ্গল চন্দ্র হত্যা মামলার এজহার নামীয় ৩ নং আসামী রফিক মন্ডল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১জন মিলে হত্যা করে।
স্বীকারোক্তিতে রফিক মন্ডল বলেন, তিনি খেঁজুর গাছ কাটেন। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যানের লোক। গত ২০ বছর ধরে বিপুল ও মঙ্গলের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান সহ গফুর, মুকিম, আকিদুল, আলী বিরোধ মেটানোর জন্য বহু চেষ্ঠা করেছেন। প্রতিবার চেয়ারম্যানের ডাকের তোয়াক্কা করতো না মঙ্গল মন্ডল। এ জন্য ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তাদের ১১ জনকে বলে যে, মঙ্গলকে শায়েস্তা করতে হবে। আবারো তিনি বলেন, তিনি ভারতে যাওয়ার পর ১১ জন মিলে মঙ্গল চন্দ্রকে মেরে হাত, পা ভেঙ্গে দিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিক, বিপুল, গফুর, মুকিম, আকিদুল, মোঃ আলী, শাওন, মিলন, উজ্জল, সোহেল ও অজ্ঞাত ১জন মিলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত দেড় টার দিকে মঙ্গল চন্দ্র মন্ডলের বাসায় যান। এসময় শাওনের হাতে পিস্তল ছিলো, রফিকের হাতে চিকুন রড, মিলনের হাতে চাইনিজ কুড়াল, বিপুলের হাতে হকিস্টিক, অন্য সবার হাতে লাঠিসোটা ছিল। শাওন, মিলন ও বিপুল বেশী মারে। অন্য সবাই এলোপাতারি ভাবে মারে। মঙ্গলের ২ পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়, কিন্তু ঘটনাস্থলে মারা যায়নি। পরে শুনেছি মঙ্গল মারা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন শহিদুল ইসলাম আলী ও তার সহযোগিরা বলে শুনেছি। আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তার কথা না শুনলে নির্যাতন করে আসছেন। এ নিয়ে ইতিপূর্বে মামলার শিকার হন। সাধারণ মানুষ এ থেকে মুক্তি চান।
কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুর রহমান বলেন, এ মামলার এজাহার নামীয় আসামীরা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। আদালতে আসামীরা ১৬৪ ধারায় উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীর নাম বলেছে। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করার কার্যক্রম চলছে।