12:38 pm, Saturday, 19 April 2025

গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা হাজরো মানুষ 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি গ্রামে ফের নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। একদিনেই অন্তত ৬০ ফুট কৃষি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এতেকরে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে কয়েকশ পরিবার।

রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভাঙন আতংকে শত শত পরিবার নদীর পারে দিন কাটাচ্ছেন। এখানে যারা বসবাস করে তাদের অধিকাংশ কয়েক দফা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এখানে বসবাস করছিলেন। অনেকেরই ছিল মাঠে শত বিঘা জমি, গোয়ালে গরু আর গোলা ভরা ধান। এখন এর সবই স্মৃতি। ৪/৫বার নদী ভাঙনে এখন অন্যের জমি চাষ করে খায়।

ষাটোর্ধ বৃদ্ধা ছনেকা বেগম বলেন, আমরা এপর্যন্ত ছয় ভাঙনের শিকার হয়েছি, এখন কোথায় যাবো, যাওনের জায়গা নেই। এ জীবনে অনেক কিছু দেখলাম। কতবার ভাঙলাম। বাবারে বুড়া হয়ে গেছি, সব কিছু হারিয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়েছি, আগে কতকিছু ছিল। কতোবড় গৃহস্থালি এখন আর তার কিছুই নাই। চোখের সামনে এগুলো সহ্য হয় না।

আর এক বয়োবৃদ্ধ আব্দুল আজিজ সরদার কয়েকজন মানুষ নিয়ে তার বসতঘর ভাঙছেন। তিনি বলেন, আর মাত্র দুই কাঠা সামনে পানি আসলেই আমার ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। সারারাত দুচোখ এক করতে পারি না, এই বুঝি নদীতে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যায়। চারদিন ধরে ভাঙছে গত রাতেই সব থেকে বেশি ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন আর যাওয়ার জায়গা নেই। এক আত্মীর একটু জায়গা আছে দুরে সেখানেই যাচ্ছি।

এক রাতেই আ. খালেক ব্যাপারী নামে কে ব্যাক্তির দশ কাঠা ফসলি জমি পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, হয়তো রাতেই তার আরও কিছু জমি হারিয়ে যাবে পদ্মার। তিনি বলেন, সরকারের উর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষের কাছে মিনতি তারা যেন ব্যাবস্থা নেয়। তা-না হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা থেকে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে এ ব্যাপারে। আগামীকাল সকালে সেটা জমা দিব। দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন চলছে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প গ্রহন না করলে মানচিত্র থেকে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আমি এই এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

‘মানুষ একটা ভাল নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় আছে’ -আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম

গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা হাজরো মানুষ 

Update Time : 12:50:35 pm, Sunday, 6 October 2024

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি গ্রামে ফের নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। একদিনেই অন্তত ৬০ ফুট কৃষি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এতেকরে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে কয়েকশ পরিবার।

রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভাঙন আতংকে শত শত পরিবার নদীর পারে দিন কাটাচ্ছেন। এখানে যারা বসবাস করে তাদের অধিকাংশ কয়েক দফা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এখানে বসবাস করছিলেন। অনেকেরই ছিল মাঠে শত বিঘা জমি, গোয়ালে গরু আর গোলা ভরা ধান। এখন এর সবই স্মৃতি। ৪/৫বার নদী ভাঙনে এখন অন্যের জমি চাষ করে খায়।

ষাটোর্ধ বৃদ্ধা ছনেকা বেগম বলেন, আমরা এপর্যন্ত ছয় ভাঙনের শিকার হয়েছি, এখন কোথায় যাবো, যাওনের জায়গা নেই। এ জীবনে অনেক কিছু দেখলাম। কতবার ভাঙলাম। বাবারে বুড়া হয়ে গেছি, সব কিছু হারিয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়েছি, আগে কতকিছু ছিল। কতোবড় গৃহস্থালি এখন আর তার কিছুই নাই। চোখের সামনে এগুলো সহ্য হয় না।

আর এক বয়োবৃদ্ধ আব্দুল আজিজ সরদার কয়েকজন মানুষ নিয়ে তার বসতঘর ভাঙছেন। তিনি বলেন, আর মাত্র দুই কাঠা সামনে পানি আসলেই আমার ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। সারারাত দুচোখ এক করতে পারি না, এই বুঝি নদীতে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যায়। চারদিন ধরে ভাঙছে গত রাতেই সব থেকে বেশি ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন আর যাওয়ার জায়গা নেই। এক আত্মীর একটু জায়গা আছে দুরে সেখানেই যাচ্ছি।

এক রাতেই আ. খালেক ব্যাপারী নামে কে ব্যাক্তির দশ কাঠা ফসলি জমি পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, হয়তো রাতেই তার আরও কিছু জমি হারিয়ে যাবে পদ্মার। তিনি বলেন, সরকারের উর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষের কাছে মিনতি তারা যেন ব্যাবস্থা নেয়। তা-না হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা থেকে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে এ ব্যাপারে। আগামীকাল সকালে সেটা জমা দিব। দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন চলছে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প গ্রহন না করলে মানচিত্র থেকে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আমি এই এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।