7:53 pm, Saturday, 19 April 2025

সিন্ডিকেটেই বাড়ে ডিমের দাম

সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বাজারে ডিমের দাম বাড়ছেই। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশী সময় ধরে চরম উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ডিম। যদিও পোল্ট্রি শিল্পে সারা দেশের ২য় বৃহত্তম জোন হিসেবে পরিচিত গোয়ালন্দ।

খুচরা পর্যায়ে রাজবাড়ীতে একটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। খামারীরা দাবি করছেন ডিমের দাম বৃদ্ধিতে তাদের কোন হাত নেই। বড় কোম্পানীর বেঁধে দেয়া দামেই তাদের ডিম বিক্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন মোবাইল ফোন ম্যাসেজের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় তাদের উৎপাদিত ডিমের মূল্য।

স্থানীয় খামারীরা জানান, গত কয়েকমাস ধরে অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মুরগীর বাচ্ছা, খাবার ও ভ্যাকসিনসহ নানা ওষুধের দাম। ফলে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ হয়েছে সাড়ে ১০টাকা থেকে ১১ টাকা। আবার সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া দামে কখনো লোকসান আবার কখনো লাভেই তাদের ডিম বিক্রি করতে হয়। ডিম খামারীরা আরো জানান, যারা ডিমের দাম নির্ধারণ করে, তারাই আবার মুরগীর খাবার ও ভ্যাকসিনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি ছোট ব্যবসায়ীরা। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে মূলত ভূমিকা বড় কোম্পানীর (নাম প্রকাশ না করে)। তারাই পোল্ট্রি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচরের খামারী মো. সুজাত হোসেন জানান, লেয়ার মুরগির (ডিম দেওয়া মুরগি) প্রতিটি একদিনের বাচ্চা ১শ থেকে ১২০ টাকা দামে বিক্রি করছে কোম্পানি গুলো, যা গত বছরের চেয়ে চারগুণ বেশী। আবার একদিন বয়সের বাচ্চা টানা ৬/৭ মাস লালন-পালন করার পর ডিম দেয়া শুরু করে। এই দীর্ঘ সময়ে মুরগীগুলো প্রস্তুত করতে বড় একটা বিনিয়োগ চলে যায়। একদিকে বাচ্চার দাম অন্যদিকে পোল্ট্রি ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিমের দাম বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের অন্যতম বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গোয়ালন্দ হ্যাচারীজ লি: এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েম খান জানান, বাচ্চা, ডিম কিংবা মাংস সব কিছুর দাম নির্ভর করে উৎপাদন খরচের উপর। গত ২/৩ বছরে পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে অনেক। অপরদিকে অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকের বেতনও বেড়ে গিয়েছে। এতেকরে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। মোটকথা বাচ্চা, ডিম ও মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে পোল্ট্রি ফিড, চিকিৎসা সামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।

ডিমের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি আরো জানান, ফেনী-কুমিল্লা এলাকারয় লেয়ার মুরগির (ডিমপারা মুরগি) অসংখ্য খামার রয়েছে। এ বছরের বন্যায় ওই সকল খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে ঘাটতির কারণে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

গোয়ালন্দ বাজারের ডিমের আড়ৎদার মো. মতিয়ার রহমান জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘খামারীদের নির্ধারিত দামে তারা ডিম কিনে থাকেন। এরপর সামান্য কিছু লাভে বিক্রি করে থাকেন। তাই ডিমের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে তাদের কোন হাত নেই।

এদিকে ভোক্তারা জানান, বাজারে প্রতিটি পন্যের সাথে মাছ-মাংসের আকাশ ছোয়া দাম। ইচ্ছা থাকলেও সব সময় কেনা যায় না। ডিমের দামটা হাতের নাগালে থাকায় তারা মাছ-মাংসের বিকল্প হিসেবে খাবার তালিকায় রাখত। কিন্তু এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। একটি ডিমের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা হলে সাধারণ মানুষ খেতে পারবে। একটি ডিমের দাম ১৫টাকা সেটি অস্বাভাবিক।

রাজবাড়ী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, নানা কারনেই ডিমের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। খামারী লাভ রেখে দুই হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌছাতে ডিমের দাম অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। এজন্য উৎপাদন খরচ কমাতে পারলে দাম কমবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

‘মানুষ একটা ভাল নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় আছে’ -আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম

সিন্ডিকেটেই বাড়ে ডিমের দাম

Update Time : 12:20:44 pm, Saturday, 26 October 2024

সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বাজারে ডিমের দাম বাড়ছেই। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশী সময় ধরে চরম উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ডিম। যদিও পোল্ট্রি শিল্পে সারা দেশের ২য় বৃহত্তম জোন হিসেবে পরিচিত গোয়ালন্দ।

খুচরা পর্যায়ে রাজবাড়ীতে একটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। খামারীরা দাবি করছেন ডিমের দাম বৃদ্ধিতে তাদের কোন হাত নেই। বড় কোম্পানীর বেঁধে দেয়া দামেই তাদের ডিম বিক্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন মোবাইল ফোন ম্যাসেজের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় তাদের উৎপাদিত ডিমের মূল্য।

স্থানীয় খামারীরা জানান, গত কয়েকমাস ধরে অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মুরগীর বাচ্ছা, খাবার ও ভ্যাকসিনসহ নানা ওষুধের দাম। ফলে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ হয়েছে সাড়ে ১০টাকা থেকে ১১ টাকা। আবার সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া দামে কখনো লোকসান আবার কখনো লাভেই তাদের ডিম বিক্রি করতে হয়। ডিম খামারীরা আরো জানান, যারা ডিমের দাম নির্ধারণ করে, তারাই আবার মুরগীর খাবার ও ভ্যাকসিনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি ছোট ব্যবসায়ীরা। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে মূলত ভূমিকা বড় কোম্পানীর (নাম প্রকাশ না করে)। তারাই পোল্ট্রি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচরের খামারী মো. সুজাত হোসেন জানান, লেয়ার মুরগির (ডিম দেওয়া মুরগি) প্রতিটি একদিনের বাচ্চা ১শ থেকে ১২০ টাকা দামে বিক্রি করছে কোম্পানি গুলো, যা গত বছরের চেয়ে চারগুণ বেশী। আবার একদিন বয়সের বাচ্চা টানা ৬/৭ মাস লালন-পালন করার পর ডিম দেয়া শুরু করে। এই দীর্ঘ সময়ে মুরগীগুলো প্রস্তুত করতে বড় একটা বিনিয়োগ চলে যায়। একদিকে বাচ্চার দাম অন্যদিকে পোল্ট্রি ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিমের দাম বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের অন্যতম বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গোয়ালন্দ হ্যাচারীজ লি: এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েম খান জানান, বাচ্চা, ডিম কিংবা মাংস সব কিছুর দাম নির্ভর করে উৎপাদন খরচের উপর। গত ২/৩ বছরে পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে অনেক। অপরদিকে অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকের বেতনও বেড়ে গিয়েছে। এতেকরে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। মোটকথা বাচ্চা, ডিম ও মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে পোল্ট্রি ফিড, চিকিৎসা সামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।

ডিমের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি আরো জানান, ফেনী-কুমিল্লা এলাকারয় লেয়ার মুরগির (ডিমপারা মুরগি) অসংখ্য খামার রয়েছে। এ বছরের বন্যায় ওই সকল খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে ঘাটতির কারণে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

গোয়ালন্দ বাজারের ডিমের আড়ৎদার মো. মতিয়ার রহমান জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘খামারীদের নির্ধারিত দামে তারা ডিম কিনে থাকেন। এরপর সামান্য কিছু লাভে বিক্রি করে থাকেন। তাই ডিমের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে তাদের কোন হাত নেই।

এদিকে ভোক্তারা জানান, বাজারে প্রতিটি পন্যের সাথে মাছ-মাংসের আকাশ ছোয়া দাম। ইচ্ছা থাকলেও সব সময় কেনা যায় না। ডিমের দামটা হাতের নাগালে থাকায় তারা মাছ-মাংসের বিকল্প হিসেবে খাবার তালিকায় রাখত। কিন্তু এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। একটি ডিমের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা হলে সাধারণ মানুষ খেতে পারবে। একটি ডিমের দাম ১৫টাকা সেটি অস্বাভাবিক।

রাজবাড়ী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, নানা কারনেই ডিমের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। খামারী লাভ রেখে দুই হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌছাতে ডিমের দাম অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। এজন্য উৎপাদন খরচ কমাতে পারলে দাম কমবে।