রাজবাড়ীতে আ’লীগের ১৭ বছরে ভূয়া প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা লোপাট
- আপডেট সময় : ১২:৫৯:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
- / ১৪৪ বার পড়া হয়েছে
রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন, ৩টি পৌরসভা ও ৫টি উপজেলা এলাকায় আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের শাসনামলে ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এসব ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ না করেই পকেটস্থ করেছে অর্থ। বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানাগেছে, ২০১৭ সালে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে দুই দিনে ১৪৭টি ওয়াজ মাহফিল এবং ৩টি নামযজ্ঞানুষ্ঠান দেখিয়ে ৪৫০ মেট্রিক টন সরকারি চাল উত্তোলন করা হয়। যার বাজার মূল্য ওই সময়ে এক কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক গত ২০১৭ সালের ২৮ জুনের চিঠি মোতাবেক ১৫০টি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খানাপিনার জন্য ৪৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ করেন। গত ২৯ জুন পৃথক তিনটি চিঠির মাধ্যমে কালুখালীর ভারপ্রাপ্ত ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মোঃ নাজমুল ইসলাম চালের ছাড়পত্র দেন। এরপর উপজেলা পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) মোঃ মকসেদুল আলম ও কালিকাপুর ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান নবাব ভুয়া পিআইসি (বাস্তবায়ন কমিটি) দেখিয়ে সব চাল উত্তোলন করেন। ওই ১০ গ্রামের ভোটার ১০ হাজার। উত্তোলনকৃত চাল প্রত্যেককে দিলে ৪৫ কেজি করে পাওয়ার কথা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলেও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের প্রভাবে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। রাজবাড়ী-২ আসনের আরো কয়েকটি ইউনিয়নে এ ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে পাংশা উপজেলায় বরাদ্দ আসা প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় তিন শত মেট্রিক টন চাল ওই সময়ে ফেরত পাঠান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় গত ২৫ জুন উপজেলা পরিষদ ওয়ারী ৩য় কিস্তির নগদ অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ১০২ টাকা, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৪ লক্ষ ১৯ হাজার ১০২ টাকা, পাংশা উপজেলায় ১৬লক্ষ ৮২ হাজার ৯৬১ টাকা, রাজবাড়ী
সদর উপজেলায় ১৮ লক্ষ ২১ হাজার ৬৪২ টাকা, কালুখালী উপজেলায় ১৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৬৭ টাকাসহ সর্বমোট ৭৮ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৭৪ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আবার পুরাতন কাজকে নতুন দেখিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন খাতা কলমে দেখানো হয়েছে।
কালুখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, আসলে গত ২৫ জুন বরাদ্দ পাওয়া যায়। এ বরাদ্দের অনুকূলে কালিকাপুর নলকাতরা জামে মসজিদ উন্নয়ন ৩লক্ষ টাকা, মৃগী চৌমুখ গ্রামের সাদ আলীর বাড়ী হইতে আলম চৌধুরীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়। এরমধ্যে মসজিদের টাকা দেওয়া হয়েছে। বাঁকী সড়ক নির্মাণের ৩লক্ষ টাকা উত্তোলন করে রাখা হয়েছে। তবে কোন কাজ হয়নি। অন্যান্য প্রকল্পের টাকা সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে না পারায় ফেরত গেছে।
রাজবাড়ী সদর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রকৌশলী বিজয় কুমার প্রামানিক বলেন, সদর উপজেলার প্রকল্প গুলো কাজ হয়েছে কিনা তিনি বলেন, আসলে শেষ সময়ে বরাদ্দ পাওয়ায় দ্রুত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কাজ হওয়ার কথা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় কালুখালীর দামুকদিয়া ঠাকুরপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির সংস্কার দেড় লক্ষ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-খাবিখা) কর্মসূচির আওতায় পাংশা উপজেলায় ১৩টি প্রকল্পে ২৬ লক্ষ টাকা ২০২৪ সালের ৪ জুন বরাদ্ধ প্রদান করা হয়। একই তারিখে কালুখালী উপজেলায় ৫টি প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৭টি প্রকল্পে ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এসব প্রকল্পে কোন কাজ হয়নি। বরাদ্দের অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে পিআইসিরা। বেশির ভাগ প্রকল্প পূর্বের বাস্তবায়ন করা প্রকল্প দেখানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) এর দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষে বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ, কালুখালী, পাংশা, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, ট্যাগ অফিসার ও ইউনিয়ন কমিটির জ¦ালানী, ভ্রমন, সম্মানী এবং আনুসংগিক ব্যায় হিসেবে ৩লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া সবগুলো প্রকল্প কাগুজে-কলমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের বিগত ১৭টি বছর শত শত ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। যার সবই সাবেক রেল মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর প্রভাবে অর্থ লোপাট করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো তদন্ত পূর্বক দোষীদের চিহিৃত করে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।