ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশন রাজবাড়ী জেলা শাখার কমিটি গঠন পাংশায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশ সভাপতি বাচ্চু, সম্পাদক রাজ্জাক ॥ রাজবাড়ী বার এসোসিয়েশনের নির্বাচন সম্পন্ন রাজবাড়ীতে মোফাজ্জেল হোসেনের ট্রাস্টের উদ্যোগে বৃত্তি প্রদান রাজবাড়ী জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাজবাড়ী হোমিওপ্যাথিক মে. কলেজের ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রাজবাড়ীতে সরকারী খাল দখল ও ফসলী জমি থেকে মাটি বিক্রির অভিযোগ রাজবাড়ীতে হারানো মোবাইল ফিরিয়ে দেয়া হলো প্রকৃত মালিকদের পাংশায় ব্যাক্তি মালিকানা জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা করার অভিযোগ গোয়ালন্দে আগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষতি 

মজাদার কাকা কাহিনী

ডাঃ রাজীব দে সরকার, সার্জারী বিশেষজ্ঞ, শিশু রোগ চিকিৎসক ও সার্জন এবং কলামিস্ট
  • আপডেট সময় : ১২:২২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৭৭ বার পড়া হয়েছে

পর্ব ১

অনেক পুরোনো ঘটনা।

তারপরো মনে হলো এটা নিয়ে লেখা উচিৎ।

সার্জারী বিভাগে কাজ করছি। রবিবার। সেদিন ছিলো আমাদের রুটিন ওটি ডে। তো আমি আমার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্যারের সাথে একটি সার্জারীতে অ্যাসিস্ট করছি।

এমন সময় ফোন এলো। স্যারের সামনে থাকায় আমি ফোনটি ধরতে পারলাম না। তবে অপরিচিত নাম্বার। ৩ থেকে ৪ বার ফোনটি এলো।

মিনিট ২০ পার হয়েছে। সার্জারী তখনো শেষ হয়নি। তবে প্রায় শেষের দিকে। আমার স্যার তখন ওয়াশ আউট হয়েছেন। এমন সময় আবার ফোন।

আমি সার্জারি করার সময় কানে একটি ব্লু-টুথ ডিভাইস ব্যবহার করি ট্রেইনি লাইফের শুরু থেকে। সে সময়টা স্যার সামনে না থাকায়, আমি সহকর্মী ইন্টার্নী চিকিৎসকের মাধ্যমে কলটি রিসিভ করলাম।

“কি বাবা, কেমন আছো, অনেক বড় ডাক্তার হয়ে গেছো নাকি? তোমারে তো ফোনে পাই না !”

“জ্বী, স্লামালিকুম, কে বলছেন, আমি আসলে একটা অপারেশন এ আছি।”

“আচ্ছা, যেখানেই থাকো, শুনো। আমি তোমার গ্রামের ‘অমুক’ কাকা। অমুক বাড়ির পাশের বাড়ি। আমার সম্মন্ধি ঝিনাইদা থেকে গেছে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হইতে। তুমি একটু দ্যাখো, কি অবস্থা”

“কাকা, জরুরী কিছু? নাহলে আমি একটু ফ্রী হয়ে আপনাকে ফোন দেই?”

“আচ্ছা, সে না হয় দিও। এখন, শুনো… তুমি একটু ঢাকা মেডিক্যাল যাও। গিয়ে দ্যাখো, ভর্তি হইসে কী না। একটা ভালো বেড দিতে বলবা। আমার বড় সম্মন্ধি, বুচ্ছো না”

“কাকা, আমি আমার হাসপাতালে অপারেশনে আছি। আমি একটু ফ্রী হয়ে আপনাকে ফোন দেই”

“শ্যাইডা, ফোন দিও, কিন্তু এক্ষুনি ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে ভর্তিডা করো। বুচ্ছো, আমার সম্মুন্ধি”

যেহেতু আমার গ্রামের অপরিচিত এই কাকা বুঝতেই পারছেন না, যে অপারেশনরত অবস্থায় একটি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়া যায় না, তাই তার সাথে কথোপকথন সমাপ্ত করলাম।

২ মিনিট পর আবার ফোন…

“শোনো, কাকা, সার্জারী করতে হবে আমার সম্মুন্ধির। বড় ডাক্তার দেখাইসে। তুমি কাল পরশুর ডেট দিয়ে দাও। ওরা ডেট পাইসে দুই সপ্তাহ পরে”

“কাকা, আমি ফ্রী হয়ে আপনাকে ফোন দিচ্ছি। আমার অপারেশনে এখনো শেষ হয়নি”

(আমি সে সময় আমবিলিকাল পোর্ট ক্লোজার করছিলাম। আদতে যা একটি ঠান্ডা মাথায় করার মতো কাজ!)

আবার ফোন… আমি এবার আর আমার ইন্টার্নীকে ফোন না ধরতে ঈশারা করলাম। ৫ মিনিটের মধ্যেই আমার কাজ শেষ হলো। আমি ওনাকে ফোন দিয়ে সব কিছু শুনলাম।

সংক্ষেপে যা হলোঃ গ্রামের র‍্যানডম এই কাকার র‍্যানডম সম্মুন্ধির পাইলস এর অপারেশন করাতে হবে।

আমি ওটিতে বসেই আমার ২ বন্ধুকে ফোন দিলাম এবং তাদের একজনের সেদিনই অ্যাডমিশন ডে।

আমার অনুরোধে আমার বন্ধু এই রোগীকে ভর্তি নেবার কথা আশ্বস্ত করলো ওরই ইউনিটে। সাথে এটাও জানালো নেক্সট রুটিন ওটিতেই অপারেশন করে দেবে। ওর রুম নাম্বার আমাকে দিলো। আমাকে বললো, রোগী যেন ওর সাথে দেখা করে।

আমি সব কিছু বুঝিয়ে বললাম র‍্যানডম এই কাকাকে। উনি বুঝলেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করবেন বলে আমাকে জানালেন।

৩ ঘন্টা পরে আমার বন্ধুর ফোন।

“কি রে, তোর রোগী তো আসলো না।”

আমি বাধ্য হয়েই র‍্যানডম কাকাকে ফোন দিলাম। প্রথম এবং দ্বিতীয়বার রিঙ বেজে শেষ হলো। উনি তৃতীয়বারে আমার ফোন ধরলেন।

“ও, বাবা, শুনো। তুমি তো ব্যস্ত ছিলা অপারেশনে। রোগী বাড়ি চলে গেছে। ওরা প্রাইভেটে অপারেশন করাবে। আর ঐ হাসপাতাল এতো ময়লা যে ওগোর আর রুচি অয় নাই। আচ্ছা ভালো থাইকো।”

“কাকা, এটা তো আমাকে আগে জানাতে পারতেন। আপনার জন্য আমার ফ্রেন্ড তো অপেক্ষা করছিলো। আপনার রোগী যায় নি দেখে, ও আমাকে ফোন… …টুট টু টুট টু”

কাকা ফোন রেখে দিয়েছেন। আমি আর কিছুই ওনাকে বলতে পারিনি।

হঠাৎ করে এক সাগর বিরক্তিতে ডুবে গেলাম। সেদিন আর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করছিলো না। মানুষের অকৃতজ্ঞতার বোঝা নিতে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে যাই মাঝে মাঝে। এই একই ধরণের ঘটনা, আমার সাথে আরো ঘটেছে। আরো ঘটবে, তাও জানি।

কারন এই জাতির অকৃতজ্ঞতার ইতিহাস বহু প্রাচীন।

 

পর্ব ২

গ্রামের পরিচিত এক কাকাকে ফোন দিলাম।

– “কাকা, স্লামালিকুম, কেমন আছেন?”

– “ওয়ালাইকুম, এই তো ভালো আছি?”

– “চাচা, খুব জরুরী দরকারে ফোন দিলাম। দরকার ছাড়া তো আপনাকে ফোন দেই না সাধারণতঃ। একটা সাহায্য লাগতো।”

– “আমি আবার ডাক্তার সাহেবরে কি সাহায্য করতে পারবো, বলো চাচা?”

– “পারবেন কাকা। কাকা আপনি রাজবাড়ীতে আছেন না এখন?

– “হ্যাঁ, আছি।”

– “কাকা, আপনি তো পাটের ব্যবসা করেন। পাটের গুদামও আছে আপনার। কাকা আমিও তো পাটের ব্যাবসায় নেমেছি। ডাক্তারি আর ভালো লাগে না। সারাদিন আগাছার যত্ন করার থেকে পাটের ব্যবসা করাই ভালো মনে হলো।”

– “অ্যাঁ…, কি কইলা?”

– “বাদ দেন কাকা। যা বলছি, বলছি। আপনি একটু গোদার বাজার ঘাটে যান। আপনার গুদাম থেকে আধ ঘন্টা দূরেই তো ঘাট”

– “ঘাটে যাবো? ক্যান?

– “কাকা, ট্রলারে আমার কয়েক মন পাট আসছে। ওখানে নামবে। আপনি একটু ওখানকার কাউরে বলে দেন। আর ঘাটের খরচটাও অনেক বেশী, একটু কমায়ে দিয়েন কাকা।”

– “কি কও তুমি। আমি ঘাটে যাবো ক্যামনে আমার গদি ফেইল্যা? আর ঐখানে তো আমার কথায় খরচ কমবে না কোন। ঘাটের যেইডা খরচ ঐডা দেওনই লাগে”

– “কি বলেন কাকা? আপনার কথায় কিছুই হবে না?”

– “না। এইডা অয় নাকি?”

– “কেন হবে না কাকা? ২ মাস আগেই আপনার রোগীকে আমি অন্য এক সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলাম। আমার হাসপাতাল রেখে আপনার রোগীর জন্য অন্য হাসপাতালেও গিয়েছিলাম স্বশরীরে। আমি নিজে সার্জারীর লোক, রোগী ভর্তি করে দিলাম মেডিসিনের আন্ডারে। মানে আমার ব্যবসা করি পাট এর, ওরা ব্যবসা করে ধানের। তারপরো, ভর্তির ব্যবস্থা করে তো দিসিলাম। ধানের ব্যবসায়ীকে ফোন দিয়ে আপনার রোগীর সব প্যাথলজি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট করে দিলাম। আবার ১ দিন পরে জামাই আদর এর মতো কেবিনেও তুলে দিলাম। যে ধানের ব্যবসায়ীকে মানে ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করে আমি এতো কিছু করলাম, আমি তাকে চিনিও না, উনিও আমাকে চিনেন না। আমার কাকা বলে তারা যথেষ্ট করেছে আপনার জন্য, আপনি নিজেও তা স্বীকার করে গেছেন। কাকা, তেমন কঠিন তো কিছু না। শুধু উপকারের পালটা উপকারটা একটু করেন…”

– “শুনো ভাতিজা… টুট টু… টুট টু…”

বিশ্রী অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ও, তার মানে, স্বপ্ন ছিলো এটা। কাকা আর পাটের ব্যবসা পুরোটাই স্বপ্ন ছিলো।

আজ রুটিন ওটি ডে। এক্ষুনি হাসপাতালে ছুটতে হবে। এটা স্বপ্ন না। এটা বাস্তব। খুব দ্রুতই রেডি হয়ে বাস্তবতার পাটের বোঝা কাঁধে নিয়ে ছুটতে হবে।

একজন চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত, পরিচিতের পরিচিত, দূর সম্পর্কের পরিচিত কিংবা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিচিত এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত, এরকম অনেক মানুষের অনেক উপকার করে চলি। প্রত্যাশাও করি না কারো প্রতিদানের।

প্রতিদিন আমার কাছে এরকম অনেকে আসেন বিভিন্ন অনুরোধ নিয়ে। নিজে সার্জারীর লোক হয়েও মেডিসিন, গাইনী কিংবা অন্যান্য বিভাগে কর্মরত আমার শিক্ষক, মিড লেভেল সহকর্মী কিংবা আমার ইন্টার্নী সহকর্মীদের অনেক বিরক্ত করি। অনেক আবদার করি। তারা সেটা সানন্দে পূরণও করে দেন।

মজা হলো, আমরা কেউই প্রতিদানের প্রত্যাশা করি না।

আমরা জানি আমরা একটি Thanks-less জব করি এবং প্রতিনিয়ত করে চলেছি।

আমরা জানি, আমাদের সাহায্যটুকুর প্রতিদান দেবার সামর্থ্য / ইচ্ছা অনেকের থাকবেও না। তাই প্রত্যাশা করি না, কারণ যেঁচে আঘাত / অবহেলা পেতে কারোরই ভালো লাগবে না।

সারাদিন অসংখ্য ফোন কল আসে… আমি সবার ফোন ধরি। এমনকি অপারেশনে থাকার সময়ও ফোন ধরতে হয়।

সেদিন খুব ভেঙে পড়বো,

যেদিন আমার ফোনটা কেউ ধরবে না।

 

পর্ব ৩

ফোনের রিং বেজে চলেছে।

আমি অপারেশন থিয়েটারে। একজন স্যারের সাথে অ্যাসিস্ট করছি।

এই মুহুর্তে ফোন ধরতে পারছি না। কারন খুব মেটিকিউলাস ডিসেকশন চলছে আর আমার হাতে টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপের ব্যাপারে আমার ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতা সর্বাধিক। কারন সামান্যতম দৃষ্টি বিচ্যুতিতে বড় iatrogenic hazard ঘটতে পারে।

ল্যাপারোস্কপি ভালোবাসি বলেই কী না জানিনা, টেলিস্কোপের প্রতি আমার প্রায়োরিটি সর্বাধিক।

Laparoscopic Surgery গুলোতে একজন Doctor হিসেবে মূল-সার্জন ‘দ্বিতীয় ঈশ্বর’ বা Second God হলেও Telescope Surgeon নির্দ্বিধায় সে ঈশ্বরের চোখ। যেহেতু অন্ধ ঈশ্বরের দাম নেই, তাই Telescope হাতে নিলে আমি স্বভাবসুলভ চপলতা ছেড়ে ধীর স্থির ‘অন্য মানুষ’ হয়ে যাই। কারন আমি যা দেখাবো, গোটা সার্জনস টিমের বাকিরা তাই দেখবেন।

একজন সিস্টার এগিয়ে গেলেন আমার ফোনের দিকে। ফোন রিসিভ করে কথা বললেন। কথা সেরে সিস্টার ফোন রেখে আমার কাছে এসে আস্তে আস্তে বললেন, “স্যার, আপনার গ্রামের এক কাকা ফোন দিয়েছেন। ফ্রী হয়ে ফোন দিতে বলেছেন”

আমি ঈশারায় ধনাত্নক সূচক মাথা নেড়ে সার্জারীতে মনোনিবেশ করলাম। সকল কাজের ইতি টেনে ওয়াশ আউট হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অপরিচিত নাম্বারের কল ছিলো। আমি ঐ নম্বরে ফোন দিলাম।

– “হ্যালো, স্লামালিকুম, আমার কাছে এই নম্বর থেকে একটু আগে ফোন এসেছিলো। কে বলছেন?”

– “অ.. তুমি আমারে চিনবা না। আমি তোমার এক কাকা হই। অনেকবার তোমাগো ঢাকার বাসায় গেছি”

– জ্বী, আপনি ভালো আছেন? আমি আসলে অপারেশনে ব্যস্ত ছিলাম। তাই আপনার ফোন ধরতে পারিনি। কিছু বলতে ফোন দিয়েছিলেন কাকা?”

– “আর কাকা, কি কবো? কেউ তো এখন আর খোঁজ খবর নেয় না। তোমার বাবা-কাকারা খুব যোগাযোগ রাখতো। তোমরা তো আর সেইরাম যোগাযোগ রাখো না। তারপর ডাক্তার অই গেসো। অহন তো আরো যুগাযোগ রাখপা না। খোঁজ খবর রাখপা না। শুনো, কাকাগের খোঁজ খবর রাহা লাগে।”

– “আসলে কাকা, আমি তো সবাইকে চিনিও না। তাই সেরকম যোগাযোগ রাখা হয়নি। গ্রামে গেলে দেখা তখন অনেকের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। কাকা, কিছু বলবেন? আমি আসলে এখনো অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে”

– আর, কাকা, শুনো, ফোন টোন দিবা সবাইরে। কে কোথায় আছে, জানা তো লাগবি। বিপদ-আপদে পড়লে কার কহন কারে লাগে বলা তো যায় না। সবাইরে ফোন টোন দিবা। আমার ছাওয়াল গুলা ঢাকায় থাহে। ওগোর সাথেও সম্পর্ক রাখপা। তুমি যুগাযোগ না রাখলে যুগাযুগ থাকপি ক্যামনে?”

(আমি বুঝলামা কাকা ব্যাটিং ক্রিজে আছেন। আমার কাছে বাউন্সার চাচ্ছেন। আমিও……)

– “কাকা, আসলে যোগাযোগ তো কেউই রাখে না। আপনিও রাখেন না। এই দেখেন আজ ফোন দিলেন। দেশে করোনায় দেড়শ এর বেশী ডাক্তার মারা গেলো। একবার তো আপনার মতো কাকারা কেউ ফোন দিয়েও আমার খবর নিলেন না যে, আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি। আমি নিজে ২৪ দিন করোনায় শয্যাশায়ী হয়ে ভুগলাম। কেউ তো ভুলেও আমার খবর নিলো না। আপনার ছেলেরা ঢাকায় থাকে। কোনদিন তো আমার মায়ের খবর নিলো না। সত্যি কথা বলতে কি কাকা, প্রয়োজন ছাড়া কেউ আমার খবর নেয় না। সবার প্রয়োজন পূরণ করে দেবার মানুষ আমি। তাই সবাই আমারে যার যার প্রয়োজনে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে – কেমন আছো। আমি কেমন আছি জানতে কেউ আমাকে ফোন দেয় না।”

– “ও, কাকা,  শুনো, সোরারদ্দি হাসপাতালে মিডিসিনে অ্যাটা রোগী ভর্তি অইছে আমাগো। এট্টু দেইহো তো…”

– “কাকা। জোরে বলেন। কিছু শুনতে পাচ্ছিনা। কথা কেটে যাচ্ছে… হ্যালো… হ্যালো”

– “কাইল ভর্তি হইছে। তুমার সোরারদ্দিতে…… মিডিসিনে….”

– “হ্যালো, কাকা, জোরে বলেন। নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে মনে হয়। হ্যালো… হ্যালো…”

– “কই কি, মিডিসিনে…….”

টুট টু টুট টু….. টুউউউ…..

[পুনশ্চ ✔ সব গল্প জীবন থেকে নেওয়া না। আবার সব গল্প কল্পকাহিনীও না।]

ট্যাগস : Rajbaribd.com

নিউজটি শেয়ার করুন

মজাদার কাকা কাহিনী

আপডেট সময় : ১২:২২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

পর্ব ১

অনেক পুরোনো ঘটনা।

তারপরো মনে হলো এটা নিয়ে লেখা উচিৎ।

সার্জারী বিভাগে কাজ করছি। রবিবার। সেদিন ছিলো আমাদের রুটিন ওটি ডে। তো আমি আমার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্যারের সাথে একটি সার্জারীতে অ্যাসিস্ট করছি।

এমন সময় ফোন এলো। স্যারের সামনে থাকায় আমি ফোনটি ধরতে পারলাম না। তবে অপরিচিত নাম্বার। ৩ থেকে ৪ বার ফোনটি এলো।

মিনিট ২০ পার হয়েছে। সার্জারী তখনো শেষ হয়নি। তবে প্রায় শেষের দিকে। আমার স্যার তখন ওয়াশ আউট হয়েছেন। এমন সময় আবার ফোন।

আমি সার্জারি করার সময় কানে একটি ব্লু-টুথ ডিভাইস ব্যবহার করি ট্রেইনি লাইফের শুরু থেকে। সে সময়টা স্যার সামনে না থাকায়, আমি সহকর্মী ইন্টার্নী চিকিৎসকের মাধ্যমে কলটি রিসিভ করলাম।

“কি বাবা, কেমন আছো, অনেক বড় ডাক্তার হয়ে গেছো নাকি? তোমারে তো ফোনে পাই না !”

“জ্বী, স্লামালিকুম, কে বলছেন, আমি আসলে একটা অপারেশন এ আছি।”

“আচ্ছা, যেখানেই থাকো, শুনো। আমি তোমার গ্রামের ‘অমুক’ কাকা। অমুক বাড়ির পাশের বাড়ি। আমার সম্মন্ধি ঝিনাইদা থেকে গেছে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হইতে। তুমি একটু দ্যাখো, কি অবস্থা”

“কাকা, জরুরী কিছু? নাহলে আমি একটু ফ্রী হয়ে আপনাকে ফোন দেই?”

“আচ্ছা, সে না হয় দিও। এখন, শুনো… তুমি একটু ঢাকা মেডিক্যাল যাও। গিয়ে দ্যাখো, ভর্তি হইসে কী না। একটা ভালো বেড দিতে বলবা। আমার বড় সম্মন্ধি, বুচ্ছো না”

“কাকা, আমি আমার হাসপাতালে অপারেশনে আছি। আমি একটু ফ্রী হয়ে আপনাকে ফোন দেই”

“শ্যাইডা, ফোন দিও, কিন্তু এক্ষুনি ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে ভর্তিডা করো। বুচ্ছো, আমার সম্মুন্ধি”

যেহেতু আমার গ্রামের অপরিচিত এই কাকা বুঝতেই পারছেন না, যে অপারেশনরত অবস্থায় একটি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়া যায় না, তাই তার সাথে কথোপকথন সমাপ্ত করলাম।

২ মিনিট পর আবার ফোন…

“শোনো, কাকা, সার্জারী করতে হবে আমার সম্মুন্ধির। বড় ডাক্তার দেখাইসে। তুমি কাল পরশুর ডেট দিয়ে দাও। ওরা ডেট পাইসে দুই সপ্তাহ পরে”

“কাকা, আমি ফ্রী হয়ে আপনাকে ফোন দিচ্ছি। আমার অপারেশনে এখনো শেষ হয়নি”

(আমি সে সময় আমবিলিকাল পোর্ট ক্লোজার করছিলাম। আদতে যা একটি ঠান্ডা মাথায় করার মতো কাজ!)

আবার ফোন… আমি এবার আর আমার ইন্টার্নীকে ফোন না ধরতে ঈশারা করলাম। ৫ মিনিটের মধ্যেই আমার কাজ শেষ হলো। আমি ওনাকে ফোন দিয়ে সব কিছু শুনলাম।

সংক্ষেপে যা হলোঃ গ্রামের র‍্যানডম এই কাকার র‍্যানডম সম্মুন্ধির পাইলস এর অপারেশন করাতে হবে।

আমি ওটিতে বসেই আমার ২ বন্ধুকে ফোন দিলাম এবং তাদের একজনের সেদিনই অ্যাডমিশন ডে।

আমার অনুরোধে আমার বন্ধু এই রোগীকে ভর্তি নেবার কথা আশ্বস্ত করলো ওরই ইউনিটে। সাথে এটাও জানালো নেক্সট রুটিন ওটিতেই অপারেশন করে দেবে। ওর রুম নাম্বার আমাকে দিলো। আমাকে বললো, রোগী যেন ওর সাথে দেখা করে।

আমি সব কিছু বুঝিয়ে বললাম র‍্যানডম এই কাকাকে। উনি বুঝলেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করবেন বলে আমাকে জানালেন।

৩ ঘন্টা পরে আমার বন্ধুর ফোন।

“কি রে, তোর রোগী তো আসলো না।”

আমি বাধ্য হয়েই র‍্যানডম কাকাকে ফোন দিলাম। প্রথম এবং দ্বিতীয়বার রিঙ বেজে শেষ হলো। উনি তৃতীয়বারে আমার ফোন ধরলেন।

“ও, বাবা, শুনো। তুমি তো ব্যস্ত ছিলা অপারেশনে। রোগী বাড়ি চলে গেছে। ওরা প্রাইভেটে অপারেশন করাবে। আর ঐ হাসপাতাল এতো ময়লা যে ওগোর আর রুচি অয় নাই। আচ্ছা ভালো থাইকো।”

“কাকা, এটা তো আমাকে আগে জানাতে পারতেন। আপনার জন্য আমার ফ্রেন্ড তো অপেক্ষা করছিলো। আপনার রোগী যায় নি দেখে, ও আমাকে ফোন… …টুট টু টুট টু”

কাকা ফোন রেখে দিয়েছেন। আমি আর কিছুই ওনাকে বলতে পারিনি।

হঠাৎ করে এক সাগর বিরক্তিতে ডুবে গেলাম। সেদিন আর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করছিলো না। মানুষের অকৃতজ্ঞতার বোঝা নিতে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে যাই মাঝে মাঝে। এই একই ধরণের ঘটনা, আমার সাথে আরো ঘটেছে। আরো ঘটবে, তাও জানি।

কারন এই জাতির অকৃতজ্ঞতার ইতিহাস বহু প্রাচীন।

 

পর্ব ২

গ্রামের পরিচিত এক কাকাকে ফোন দিলাম।

– “কাকা, স্লামালিকুম, কেমন আছেন?”

– “ওয়ালাইকুম, এই তো ভালো আছি?”

– “চাচা, খুব জরুরী দরকারে ফোন দিলাম। দরকার ছাড়া তো আপনাকে ফোন দেই না সাধারণতঃ। একটা সাহায্য লাগতো।”

– “আমি আবার ডাক্তার সাহেবরে কি সাহায্য করতে পারবো, বলো চাচা?”

– “পারবেন কাকা। কাকা আপনি রাজবাড়ীতে আছেন না এখন?

– “হ্যাঁ, আছি।”

– “কাকা, আপনি তো পাটের ব্যবসা করেন। পাটের গুদামও আছে আপনার। কাকা আমিও তো পাটের ব্যাবসায় নেমেছি। ডাক্তারি আর ভালো লাগে না। সারাদিন আগাছার যত্ন করার থেকে পাটের ব্যবসা করাই ভালো মনে হলো।”

– “অ্যাঁ…, কি কইলা?”

– “বাদ দেন কাকা। যা বলছি, বলছি। আপনি একটু গোদার বাজার ঘাটে যান। আপনার গুদাম থেকে আধ ঘন্টা দূরেই তো ঘাট”

– “ঘাটে যাবো? ক্যান?

– “কাকা, ট্রলারে আমার কয়েক মন পাট আসছে। ওখানে নামবে। আপনি একটু ওখানকার কাউরে বলে দেন। আর ঘাটের খরচটাও অনেক বেশী, একটু কমায়ে দিয়েন কাকা।”

– “কি কও তুমি। আমি ঘাটে যাবো ক্যামনে আমার গদি ফেইল্যা? আর ঐখানে তো আমার কথায় খরচ কমবে না কোন। ঘাটের যেইডা খরচ ঐডা দেওনই লাগে”

– “কি বলেন কাকা? আপনার কথায় কিছুই হবে না?”

– “না। এইডা অয় নাকি?”

– “কেন হবে না কাকা? ২ মাস আগেই আপনার রোগীকে আমি অন্য এক সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলাম। আমার হাসপাতাল রেখে আপনার রোগীর জন্য অন্য হাসপাতালেও গিয়েছিলাম স্বশরীরে। আমি নিজে সার্জারীর লোক, রোগী ভর্তি করে দিলাম মেডিসিনের আন্ডারে। মানে আমার ব্যবসা করি পাট এর, ওরা ব্যবসা করে ধানের। তারপরো, ভর্তির ব্যবস্থা করে তো দিসিলাম। ধানের ব্যবসায়ীকে ফোন দিয়ে আপনার রোগীর সব প্যাথলজি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট করে দিলাম। আবার ১ দিন পরে জামাই আদর এর মতো কেবিনেও তুলে দিলাম। যে ধানের ব্যবসায়ীকে মানে ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করে আমি এতো কিছু করলাম, আমি তাকে চিনিও না, উনিও আমাকে চিনেন না। আমার কাকা বলে তারা যথেষ্ট করেছে আপনার জন্য, আপনি নিজেও তা স্বীকার করে গেছেন। কাকা, তেমন কঠিন তো কিছু না। শুধু উপকারের পালটা উপকারটা একটু করেন…”

– “শুনো ভাতিজা… টুট টু… টুট টু…”

বিশ্রী অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ও, তার মানে, স্বপ্ন ছিলো এটা। কাকা আর পাটের ব্যবসা পুরোটাই স্বপ্ন ছিলো।

আজ রুটিন ওটি ডে। এক্ষুনি হাসপাতালে ছুটতে হবে। এটা স্বপ্ন না। এটা বাস্তব। খুব দ্রুতই রেডি হয়ে বাস্তবতার পাটের বোঝা কাঁধে নিয়ে ছুটতে হবে।

একজন চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত, পরিচিতের পরিচিত, দূর সম্পর্কের পরিচিত কিংবা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিচিত এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত, এরকম অনেক মানুষের অনেক উপকার করে চলি। প্রত্যাশাও করি না কারো প্রতিদানের।

প্রতিদিন আমার কাছে এরকম অনেকে আসেন বিভিন্ন অনুরোধ নিয়ে। নিজে সার্জারীর লোক হয়েও মেডিসিন, গাইনী কিংবা অন্যান্য বিভাগে কর্মরত আমার শিক্ষক, মিড লেভেল সহকর্মী কিংবা আমার ইন্টার্নী সহকর্মীদের অনেক বিরক্ত করি। অনেক আবদার করি। তারা সেটা সানন্দে পূরণও করে দেন।

মজা হলো, আমরা কেউই প্রতিদানের প্রত্যাশা করি না।

আমরা জানি আমরা একটি Thanks-less জব করি এবং প্রতিনিয়ত করে চলেছি।

আমরা জানি, আমাদের সাহায্যটুকুর প্রতিদান দেবার সামর্থ্য / ইচ্ছা অনেকের থাকবেও না। তাই প্রত্যাশা করি না, কারণ যেঁচে আঘাত / অবহেলা পেতে কারোরই ভালো লাগবে না।

সারাদিন অসংখ্য ফোন কল আসে… আমি সবার ফোন ধরি। এমনকি অপারেশনে থাকার সময়ও ফোন ধরতে হয়।

সেদিন খুব ভেঙে পড়বো,

যেদিন আমার ফোনটা কেউ ধরবে না।

 

পর্ব ৩

ফোনের রিং বেজে চলেছে।

আমি অপারেশন থিয়েটারে। একজন স্যারের সাথে অ্যাসিস্ট করছি।

এই মুহুর্তে ফোন ধরতে পারছি না। কারন খুব মেটিকিউলাস ডিসেকশন চলছে আর আমার হাতে টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপের ব্যাপারে আমার ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতা সর্বাধিক। কারন সামান্যতম দৃষ্টি বিচ্যুতিতে বড় iatrogenic hazard ঘটতে পারে।

ল্যাপারোস্কপি ভালোবাসি বলেই কী না জানিনা, টেলিস্কোপের প্রতি আমার প্রায়োরিটি সর্বাধিক।

Laparoscopic Surgery গুলোতে একজন Doctor হিসেবে মূল-সার্জন ‘দ্বিতীয় ঈশ্বর’ বা Second God হলেও Telescope Surgeon নির্দ্বিধায় সে ঈশ্বরের চোখ। যেহেতু অন্ধ ঈশ্বরের দাম নেই, তাই Telescope হাতে নিলে আমি স্বভাবসুলভ চপলতা ছেড়ে ধীর স্থির ‘অন্য মানুষ’ হয়ে যাই। কারন আমি যা দেখাবো, গোটা সার্জনস টিমের বাকিরা তাই দেখবেন।

একজন সিস্টার এগিয়ে গেলেন আমার ফোনের দিকে। ফোন রিসিভ করে কথা বললেন। কথা সেরে সিস্টার ফোন রেখে আমার কাছে এসে আস্তে আস্তে বললেন, “স্যার, আপনার গ্রামের এক কাকা ফোন দিয়েছেন। ফ্রী হয়ে ফোন দিতে বলেছেন”

আমি ঈশারায় ধনাত্নক সূচক মাথা নেড়ে সার্জারীতে মনোনিবেশ করলাম। সকল কাজের ইতি টেনে ওয়াশ আউট হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অপরিচিত নাম্বারের কল ছিলো। আমি ঐ নম্বরে ফোন দিলাম।

– “হ্যালো, স্লামালিকুম, আমার কাছে এই নম্বর থেকে একটু আগে ফোন এসেছিলো। কে বলছেন?”

– “অ.. তুমি আমারে চিনবা না। আমি তোমার এক কাকা হই। অনেকবার তোমাগো ঢাকার বাসায় গেছি”

– জ্বী, আপনি ভালো আছেন? আমি আসলে অপারেশনে ব্যস্ত ছিলাম। তাই আপনার ফোন ধরতে পারিনি। কিছু বলতে ফোন দিয়েছিলেন কাকা?”

– “আর কাকা, কি কবো? কেউ তো এখন আর খোঁজ খবর নেয় না। তোমার বাবা-কাকারা খুব যোগাযোগ রাখতো। তোমরা তো আর সেইরাম যোগাযোগ রাখো না। তারপর ডাক্তার অই গেসো। অহন তো আরো যুগাযোগ রাখপা না। খোঁজ খবর রাখপা না। শুনো, কাকাগের খোঁজ খবর রাহা লাগে।”

– “আসলে কাকা, আমি তো সবাইকে চিনিও না। তাই সেরকম যোগাযোগ রাখা হয়নি। গ্রামে গেলে দেখা তখন অনেকের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। কাকা, কিছু বলবেন? আমি আসলে এখনো অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে”

– আর, কাকা, শুনো, ফোন টোন দিবা সবাইরে। কে কোথায় আছে, জানা তো লাগবি। বিপদ-আপদে পড়লে কার কহন কারে লাগে বলা তো যায় না। সবাইরে ফোন টোন দিবা। আমার ছাওয়াল গুলা ঢাকায় থাহে। ওগোর সাথেও সম্পর্ক রাখপা। তুমি যুগাযোগ না রাখলে যুগাযুগ থাকপি ক্যামনে?”

(আমি বুঝলামা কাকা ব্যাটিং ক্রিজে আছেন। আমার কাছে বাউন্সার চাচ্ছেন। আমিও……)

– “কাকা, আসলে যোগাযোগ তো কেউই রাখে না। আপনিও রাখেন না। এই দেখেন আজ ফোন দিলেন। দেশে করোনায় দেড়শ এর বেশী ডাক্তার মারা গেলো। একবার তো আপনার মতো কাকারা কেউ ফোন দিয়েও আমার খবর নিলেন না যে, আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি। আমি নিজে ২৪ দিন করোনায় শয্যাশায়ী হয়ে ভুগলাম। কেউ তো ভুলেও আমার খবর নিলো না। আপনার ছেলেরা ঢাকায় থাকে। কোনদিন তো আমার মায়ের খবর নিলো না। সত্যি কথা বলতে কি কাকা, প্রয়োজন ছাড়া কেউ আমার খবর নেয় না। সবার প্রয়োজন পূরণ করে দেবার মানুষ আমি। তাই সবাই আমারে যার যার প্রয়োজনে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে – কেমন আছো। আমি কেমন আছি জানতে কেউ আমাকে ফোন দেয় না।”

– “ও, কাকা,  শুনো, সোরারদ্দি হাসপাতালে মিডিসিনে অ্যাটা রোগী ভর্তি অইছে আমাগো। এট্টু দেইহো তো…”

– “কাকা। জোরে বলেন। কিছু শুনতে পাচ্ছিনা। কথা কেটে যাচ্ছে… হ্যালো… হ্যালো”

– “কাইল ভর্তি হইছে। তুমার সোরারদ্দিতে…… মিডিসিনে….”

– “হ্যালো, কাকা, জোরে বলেন। নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে মনে হয়। হ্যালো… হ্যালো…”

– “কই কি, মিডিসিনে…….”

টুট টু টুট টু….. টুউউউ…..

[পুনশ্চ ✔ সব গল্প জীবন থেকে নেওয়া না। আবার সব গল্প কল্পকাহিনীও না।]