অন্ডকোষের ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ রোগ
- আপডেট সময় : ০৬:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১০৬ বার পড়া হয়েছে
পুরুষদেহের অন্যতম সংবেদী অঙ্গ অন্ডকোষ ও অন্ডথলি। এই অঙ্গ পুরুষ প্রজননতন্ত্রেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুক্রাণু ও টেস্টোস্টেরন হরমোন এখান থেকে উৎপাদিত হয়। গোপন এই অঙ্গের নানা রোগ ও উপসর্গ নিয়ে আমরা একদিনে যেমন উদাসীন থাকি, অন্যদিকে অন্যান্য রোগের মতো সাধারণ আলাপচারিতায় এই প্রসঙ্গগুলো আসে না। ফলে রোগ যখন জটিল আকার ধারণ করে, তখন রোগীর ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্নক আকার ধারণ করে।
জন্মের পূর্বে গর্ভাবস্থায় সাধারণতঃ অন্ডকোষ দুটি ডেভেলপমেন্টাল কারনে পেটের ভেতরে থাকে। গর্ভকালীন ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম মাসের মধ্যে এগুলো আস্তে আস্তে অন্ডথলিতে নেমে আসে। যদি জন্মের পরেও এগুলো অন্ডথলিতে না নামে, তখন আমরা একে Undescended Testis অথবা Incompletely Descended Testis বলি। এই রোগের রোগীও হরহামেশাই আমাদের চেম্বারে আসেন।
সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকরা এই অন্ডকোষের নানা রোগের রোগী দেখে থাকেন। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি রোগ নিয়ে আজ সংক্ষেপে কথা বলবো।
১। টরশন অব টেসটিস
এই রোগে অন্ডকোষ দু’টি অন্ডথলির ভেতর এমনভাবে প্যাঁচ খেয়ে যায়, যে অনেক সময় অন্ডকোষের রক্ত প্রবাহ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণতঃ ১০ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের এ রোগটি হবার ঝুঁকি সর্বাধিক থাকে। কিছু ফ্যাক্টরকে দায়ী করা হয় এই রোগটির জন্য। তারপমাত্রার উত্থানপতন, আঘাত, যৌনক্রিয়া, পেটের মাংসপেশীর অকস্মাৎ সংকোচন, ভারী ওজন দ্রুত তোলা, অনিয়ন্ত্রিত খেলাধুলা এসব কিছুই এই রোগ ঘটাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
লক্ষণঃ (১) তলপেট, কুঁচকি এবং অন্ডথলিতে আকস্মিক অসহনীয় ব্যথা শুরু হয় (২) অন্ডথলি লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে
রোগ নির্ণয়ঃ রোগী একজন চিকিৎসক পরীক্ষা করা মাত্রই আসলে বুঝতে পারেন যে রোগী টেস্টিকুলার টরশনে আক্রান্ত। Doppler Ultrasound Scanning এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বা অনুপস্থিতি নিরূপন করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসাঃ অতি দ্রুত সার্জারি করাই এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা। দেরি করে সার্জারি করে আক্রান্ত অন্ডকোষ চিরতরে কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে। তবে দ্রুত ও সময়মতো অপারেশন করলে অন্ডকোষ কাটার প্রয়োজন পরে না। অসুস্থ অন্ডকোষের পাশাপাশি সুস্থ অন্ডকোষটিও আমরা অবজার্ভ করে আসি। প্রায়শইঃ অন্ডোকোষগুলোর প্রোলিন ফিক্সেশন করা হয় যাতে রোগটি আর কখনো না হয়।
২. অ্যাকিউট এপিডিডাইমো–অর্কাইটিস (অন্ডকোষের প্রদাহ)
অন্ডকোষের একটি প্রচলিত রোগ হলো অন্ডকোষের প্রদাহ। কিশোর ও তরুণদের এই রোগটি বেশি হয়। অন্ডকোষের এক ধরণের সংক্রমনের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। অন্ডকোষ প্রদাহের কারণ অন্ডোকোষ প্রদাহ একটি স্বাভাবিক রোগ হলেও এর কারণ সম্পর্কে আমরা অবগত নই। চিকিৎসা না নিলে অন্ডথলিতে অ্যাবসেস, অন্ডকোষ ছোট হয়ে যাওয়া এমনকি প্রজননক্ষমতাও বিনষ্ট হতে পারে।
কেন হয়ঃ অন্ডকোষ প্রদাহের প্রধানতম কারণের মধ্যে আছে মূত্রনালীর সংক্রমণ ও প্রোস্টেট সংক্রমণ। এছাড়াও মানসিক আঘাত, যক্ষ্মারোগ, পুরুষ ব্রুসেলোসিস সংক্রামিত হওয়ার ফলেও এ রোগ হয়ে থাকে। Urethral instrumentation এর কারনে এই রোগ হতে পারে। দীর্ঘদিনের Urinary Tract Infection থেকেও এ রোগ হতে পারে। অনেক সময় টিবি বা মাম্পস রোগ থেকেও অর্কাইটিস হয়।
লক্ষণঃ (১) অন্ডকোষে, তলপেটে বা ইউরিনেশনের সময় প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। (২) কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে (৩) অন্ডথলি ফুলে যেতে পারে। (৪) বমিবমি ভাব হতে পারে।
চিকিৎসাঃ চিকিৎসকের কাছে দ্রুত আসতে হবে। কারন ইনফেকশন যেহেতু জটিলতা বাড়াতে পারে। তাই চিকিৎসক এর দেওয়া আপনার রোগের সুনির্দিষ্ট মেডিসিন সেবন করতে হবে। সাধারণতঃ এই রোগে সার্জারির প্রয়োজন হয় না। অনেকের বার বার এ রোগটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আলটাসনোগ্রাম সহ আরো কিছু পরীক্ষা করে রোগের কারন খুঁজে বের করতে হবে।
৩. হাইড্রোসিল
অন্ডথলির একটি লেয়ারের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিমাণে Serous fluid জমা হলে আমরা একে হাইড্রোসিল বলি। দুই ধরণের হাইড্রোসিল হয়, প্রাইমারি হাইড্রোসিল আর সেকেন্ডারি হাইড্রোসিল। প্রাইমারি হাইড্রোসিল কোন কারন ছাড়াই হতে পারে আবার জন্মগত ভাবেও থাকতে পারে। শিশুদের বড়দের সবারই হাইড্রোসিল হতে পারে, যদিও তাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভিন্নতা রয়েছে।
কেন হয়ঃ প্রাইমারি হাইড্রোসিল ৪টি কারনে হতে পারে (১) পেটের সাথে অন্ডথলির কানেকশন যা জন্মের বন্ধ হয়ে যাবার কথা, সেটা বন্ধ না হলে বা নতুন করে সৃষ্টি হলে (২) অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্লুইড নিঃসরণ হলে (৩) ফ্লুইড শোষণের মাত্রা কমে গেলে আর (৪) অন্ডথলির lymphatic drainage system এ কোন সমস্যা দেখা দিলে। অনেক সময় encysted hydrocele of the cord হিসেবেও দেখা দিতে পারে।
লক্ষণঃ (১) অন্ডথলি ধীরে ধীরে পানি দিয়ে ভরে ফুলে বিশাল আকার ধারণ করবে। এতোই বড় হবে যে সেসময় অন্ডকোষের উপস্থিতি পর্যন্ত বোঝা যায় না (২) পরবর্তী অবস্থায় অন্ডথলিতে ব্যাথা হতে শুরু করে।
রোগ নির্ণয়ঃ একজন চিকিৎসক শুধু রোগীকে শারীরিক পরীক্ষা করেই বলে দিতে পারেন যে রোগীর হাইড্রোসিল হয়েছে।
চিকিৎসাঃ এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি। ছোটদের জন্য Herniotomy অপারেশন করা হয়। আর বড়দের জন্য Jaboulay’s Procedure (Eversion) অথবা Lord’s Procedure (Plication) এই দুইটি অপারেশনই সর্বাধিক জনপ্রিয়।
সুতরাং, অন্ডকোষ ও অন্ডথলির রোগ নিয়ে উদাসীনতা না দেখিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে অনেক অনেক বড় বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।