9:13 am, Monday, 2 June 2025

রাজবাড়ীতে ভূমিহীন কৃষকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের খাস চর পদ্মা এলাকায় ফজলু বেপারী নামে স্থানীয় একটি পরিবারের নামে শত একর খাস জমির বিএস রেকর্ড করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকার শত শত ভূমিহীন কৃষক শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী জেলা সদরের ধাওয়াপাড়া ফেরী ঘাট এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
চন্দনী ইউনিয়নের ভূমিহীন ও শ্রমজীবী এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফকীর শাহাদত হোসেন, রাজবাড়ী জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুন কুমার সরকার, রাজবাড়ী জেলা বারের আইনজীবি এ্যাড. আরব আলী, স্থানীয় কৃষক ফজের আলী, আতাউর রহমান, আব্দুল হাকিম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বক্তারা বলেন, জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের চর পদ্মা, হাটবাড়ীয়া ও কাবিলপুর সহ এ অঞ্চলে সহস্রাধিক একর খাস জমি রয়েছে। এসব জমি দীর্ঘদিন ভূমিগ্রাসীরা নামে-বেনামে ভূঁয়া ও জাল কাগজপত্র তৈরী করে ভোগদখল করে আসছে। এর ফলে আবাদযোগ্য অনেক কৃষি জমি অনাবাদী থেকে যাচ্ছে এবং শত শত কৃষক চাষের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চন্দনী ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন, চর পদ্মা মৌজায় সাড়ে ৩’শ একর জমি বিএস রেকর্ডের আওতায় রয়েছে। এর বাইরে প্রায় ২’শত একর সরকারী খাস জমি রয়েছে। এর বাইরেও পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি মৌজায় অন্ততঃ ৫’শ একর জমি রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চর পদ্মা এলাকার বিএস রেকর্ডভূক্ত জমির বেশীর ভাগই রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা কোটিপতি ফজলুল হক, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই বোন, ভাগ্নে ও শ^শুরালয়ের আত্নীয়-স্বজন সহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে-বেনামে রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ফজলুল হকের স্ত্রী নুরুন নাহারের নামে ৫৫ নং খতিয়ানে ৮.৫৩ একর, ছেলে শওকত আলী, শাহিনুর আলম, ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং কন্যা সুরভি খাতুন ও সৌরিন খাতুনের নামে ৮২ নং খতিয়ানে ৯.৪১ একর, ৮৩ নং খতিয়ানে ৯.৯৭ একর এবং ৮৪ নং খতিয়ানে ৫.৫০ একর জমি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ফজলু বেপারীর ঢাকায় অবস্থানরত ভাগ্নে জাহাঙ্গীর মিয়া ও মিঠু মিয়ার নামে ৪৬ নং খতিয়ানে ৬.৭০ একর, বড় ভাই লতিফ মাষ্টারের নামে ৮১ নং খতিয়ানে ৭.২১ একর, শ^শুরবাড়ীর আত্নীয় শামসুল হক মিয়া, কাদের মিয়া ও মিন্টু মিয়ার নামে ৮৮ নং খতিয়ানে ৫.৮০ একর জমি রেকর্ড হয়েছে। বিএস রেকর্ড পর্যালোচনায় শ^শুরালয়ের আত্নীয় শামসুল হক মিয়ার ৪ ছেলে সফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও বিপ্লব মিয়ার নামে ৯২ নং খতিয়ানে ৩.১৩ একর এবং চট্রগ্রাম কাষ্টমস কর্মকর্তা বাহার মিয়া সহ অন্যান্যদের নামে ৮২ নং খতিয়ানে ৫.৩৫ একর জমি রেকর্ড হয়েছে। এর বাইরে ফজলুল হক বেপারীর নামে রেকর্ডকৃত জমির তথ্য গোপন করা হয়েছে ।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ফজলুল হক বেপারীর একক কর্তৃত্বে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এসব জমির রেকর্ড প্রস্তত করা হয়েছে। রেকর্ডকৃত জমির বর্তমান মালিকদের অধিকাংশই মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে শিল্পপতি, চিকিৎসক ও কাষ্টমস কর্মকর্তা সহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা রয়েছেন।
জানা গেছে, ফজলুল হক, রাজবাড়ী শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। রাজবাড়ী বাজারে ঝালাইপট্টিতে ৬ সাটারের বৃহৎ ব্যবসা কেন্দ্র, ঘাসবাজার সংলগ্ন মার্কেট, বিনোদপুর মৌজায় বাড়ী এবং শ্রীপুরে পৃথক বাড়ী ও একটি  শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বড় ছেলে স্বপরিবারে ঢাকায়  বসবাস করেন। মেঝ ছেলে রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্স নতুন বাজারে হার্ডওয়ার ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং ছোট ছেলে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। এদের সকলের নামেই চন্দনী ইউনিয়নের চর পদ্মা মৌজার খাস জমি রেকর্ড হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফজলুল হক বেপারীর বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে এসব জমি প্রথমে বন্দোবস্ত নেওয়া হয়। ১৫ বছর পর্যন্ত বিক্রয় ও হস্তান্তরের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরপর ওইসব জমি ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তর হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানকার প্রায় ২শত একর জমি সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য চায়না সিডিটিও এনগ্রীণ কোম্পানীর কাছে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক জমি প্রতি শতাংশ ১০ হাজার ৫০০ টাকা হারে বিক্রি করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর চন্দনীর প্রস্তাবিত সোলার পাওয়ার প্লান্টের স্থানীয় প্রতিনিধি অগ্রণী ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারী সংসদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, এক বছরের জন্য চায়না ওই কোম্পানী পরীক্ষামূলকভাবে লীজ নেয়। পরবর্তীতে তারা জমি ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ণ সহায়তা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হলে এখানে প্লান্টের কাজও অচিরেই শুরু হবে। এতে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সমস্যা দূর হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

‘মানুষ একটা ভাল নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় আছে’ -আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম

রাজবাড়ীতে ভূমিহীন কৃষকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

Update Time : 07:09:52 pm, Saturday, 26 October 2024

রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের খাস চর পদ্মা এলাকায় ফজলু বেপারী নামে স্থানীয় একটি পরিবারের নামে শত একর খাস জমির বিএস রেকর্ড করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকার শত শত ভূমিহীন কৃষক শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী জেলা সদরের ধাওয়াপাড়া ফেরী ঘাট এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
চন্দনী ইউনিয়নের ভূমিহীন ও শ্রমজীবী এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফকীর শাহাদত হোসেন, রাজবাড়ী জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুন কুমার সরকার, রাজবাড়ী জেলা বারের আইনজীবি এ্যাড. আরব আলী, স্থানীয় কৃষক ফজের আলী, আতাউর রহমান, আব্দুল হাকিম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বক্তারা বলেন, জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের চর পদ্মা, হাটবাড়ীয়া ও কাবিলপুর সহ এ অঞ্চলে সহস্রাধিক একর খাস জমি রয়েছে। এসব জমি দীর্ঘদিন ভূমিগ্রাসীরা নামে-বেনামে ভূঁয়া ও জাল কাগজপত্র তৈরী করে ভোগদখল করে আসছে। এর ফলে আবাদযোগ্য অনেক কৃষি জমি অনাবাদী থেকে যাচ্ছে এবং শত শত কৃষক চাষের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চন্দনী ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন, চর পদ্মা মৌজায় সাড়ে ৩’শ একর জমি বিএস রেকর্ডের আওতায় রয়েছে। এর বাইরে প্রায় ২’শত একর সরকারী খাস জমি রয়েছে। এর বাইরেও পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি মৌজায় অন্ততঃ ৫’শ একর জমি রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চর পদ্মা এলাকার বিএস রেকর্ডভূক্ত জমির বেশীর ভাগই রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা কোটিপতি ফজলুল হক, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই বোন, ভাগ্নে ও শ^শুরালয়ের আত্নীয়-স্বজন সহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে-বেনামে রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ফজলুল হকের স্ত্রী নুরুন নাহারের নামে ৫৫ নং খতিয়ানে ৮.৫৩ একর, ছেলে শওকত আলী, শাহিনুর আলম, ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং কন্যা সুরভি খাতুন ও সৌরিন খাতুনের নামে ৮২ নং খতিয়ানে ৯.৪১ একর, ৮৩ নং খতিয়ানে ৯.৯৭ একর এবং ৮৪ নং খতিয়ানে ৫.৫০ একর জমি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ফজলু বেপারীর ঢাকায় অবস্থানরত ভাগ্নে জাহাঙ্গীর মিয়া ও মিঠু মিয়ার নামে ৪৬ নং খতিয়ানে ৬.৭০ একর, বড় ভাই লতিফ মাষ্টারের নামে ৮১ নং খতিয়ানে ৭.২১ একর, শ^শুরবাড়ীর আত্নীয় শামসুল হক মিয়া, কাদের মিয়া ও মিন্টু মিয়ার নামে ৮৮ নং খতিয়ানে ৫.৮০ একর জমি রেকর্ড হয়েছে। বিএস রেকর্ড পর্যালোচনায় শ^শুরালয়ের আত্নীয় শামসুল হক মিয়ার ৪ ছেলে সফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও বিপ্লব মিয়ার নামে ৯২ নং খতিয়ানে ৩.১৩ একর এবং চট্রগ্রাম কাষ্টমস কর্মকর্তা বাহার মিয়া সহ অন্যান্যদের নামে ৮২ নং খতিয়ানে ৫.৩৫ একর জমি রেকর্ড হয়েছে। এর বাইরে ফজলুল হক বেপারীর নামে রেকর্ডকৃত জমির তথ্য গোপন করা হয়েছে ।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ফজলুল হক বেপারীর একক কর্তৃত্বে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এসব জমির রেকর্ড প্রস্তত করা হয়েছে। রেকর্ডকৃত জমির বর্তমান মালিকদের অধিকাংশই মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে শিল্পপতি, চিকিৎসক ও কাষ্টমস কর্মকর্তা সহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা রয়েছেন।
জানা গেছে, ফজলুল হক, রাজবাড়ী শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। রাজবাড়ী বাজারে ঝালাইপট্টিতে ৬ সাটারের বৃহৎ ব্যবসা কেন্দ্র, ঘাসবাজার সংলগ্ন মার্কেট, বিনোদপুর মৌজায় বাড়ী এবং শ্রীপুরে পৃথক বাড়ী ও একটি  শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বড় ছেলে স্বপরিবারে ঢাকায়  বসবাস করেন। মেঝ ছেলে রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্স নতুন বাজারে হার্ডওয়ার ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং ছোট ছেলে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। এদের সকলের নামেই চন্দনী ইউনিয়নের চর পদ্মা মৌজার খাস জমি রেকর্ড হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফজলুল হক বেপারীর বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে এসব জমি প্রথমে বন্দোবস্ত নেওয়া হয়। ১৫ বছর পর্যন্ত বিক্রয় ও হস্তান্তরের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরপর ওইসব জমি ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তর হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানকার প্রায় ২শত একর জমি সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য চায়না সিডিটিও এনগ্রীণ কোম্পানীর কাছে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক জমি প্রতি শতাংশ ১০ হাজার ৫০০ টাকা হারে বিক্রি করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর চন্দনীর প্রস্তাবিত সোলার পাওয়ার প্লান্টের স্থানীয় প্রতিনিধি অগ্রণী ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারী সংসদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, এক বছরের জন্য চায়না ওই কোম্পানী পরীক্ষামূলকভাবে লীজ নেয়। পরবর্তীতে তারা জমি ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ণ সহায়তা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হলে এখানে প্লান্টের কাজও অচিরেই শুরু হবে। এতে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সমস্যা দূর হবে।