রুবেলুর রহমান : রাজবাড়ী জেলাবাসীর একমাত্র আধুনিক চিকিৎসার ভরসাস্থল রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল। বর্তমানে হাসপাতালটির প্রধান ফটক, জরুরী বিভাগ সহ পুরো কম্পাউন্ডই রয়েছে অটোরিক্সার দখলে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে জরুরি বিভাগের রোগী আনা নেওয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল জেলার ৫ উপজেলার ১২ থেকে ১৪ লক্ষ মানুষের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসার আশ্রয়স্থল। ১শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখানে ভর্তির রোগীর সংখ্যা থাকে বেশি। এছাড়া প্রতিদিন আউটডোরে ১ হাজারের অধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ফলে আউটডোর ও জরুরী বিভাগে রোগীর চাপ থাকে বেশি।
রোগীর স্বজন জামিলুর রহমান, আলমগীর হোসেন, নাজমা বেগম সহ অনেকে বলেন, পুরো হাসপাতাল এখন অটোরিক্সার দখলে। বিশেষ করে জরুরী বিভাগের সামনে রাস্তার পাশে রিকশাগুলো এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, তাতে রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স সহ অন্যান্য বাহন ঢোকা ও বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক সময় সিরিয়ালও হয়ে যায়। কিন্তু এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নাই, তারা যেন দেখেও দেখেন নাই এসব। তারা আরো বলেন, রিক্সা ও অটোচালকদের কিছু বললে তারা উল্টো কথা বলে এবং সরতে বললেও সরে না। জরুরী রোগী আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরী রোগী পরিবহনকৃত যানবাহন ছাড়া অন্য কোন যানবাহন হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে দেয়া উচিত না।
অটোরিকশা চালক আইয়ুব সহ কয়েকজন বলেন, ভাড়া পাবার আশায় আমরা হাসপাতালের ভেতরে থাকি। আমাদের কারণে কোন সমস্যা হয় না এবং আমরা রাস্তা ছেড়ে এক পাশে সিরিয়াল দিয়ে থাকি। কিন্তু রিক্সাগুলো কোন কথা না শুনে জরুরি বিভাগের সামনের রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে গাড়ি আসা যাওয়ার সমস্যা হয়। তাছাড়া হাসপাতালে ভেতর আমাদের আসা যাওয়া কোন বিধি নিষেধ নাই।
রিক্সা চালক চান মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, মিলন মিয়া সহ কয়েকজন বলেন, আমরা গরিব মানুষ রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। যার কারণে ভাড়া পাবার আশায় হাসপাতালের ভেতর আসি। তবে ভেতর আসতে আমাদের কেউ বাধা দেয় না। জরুরী বিভাগের সামনে রাস্তায় আমরা সিরিয়াল দিয়ে রিক্সা রাখলেও অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনলেই নিজ থেকে রিক্সা সরিয়ে দেই এবং রোগীদের আসা যাওয়ার সহযোগিতা করি। আমাদের কারণে আনা নেওয়ায় কোন সমস্যা হয় না।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সমাধান করা সম্ভব হয় নাই। এর আগে হাসপাতালের মূল গেইটে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু উশৃংখল ব্যক্তিরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার পর থেকে গেট মুক্ত রাখা হয়েছে। তারপরও হাসপাতালে ভিতরে প্রবেশ করা অ্যাম্বুলেন্স, রিক্সা, অটোরিক্সা চালকদের নির্দেশনা দেয়া আছে রোগী আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকু হাসপাতালে ভেতর অবস্থান করবে। কিন্তু কেউ কথা শুনছেন না। এদের মধ্যে সচেতনতার অভাব আছে। আর জনবল সংকট থাকায় গেটে সার্বক্ষণিক লোক নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাউকে দিলে তার গায়ে পর্যন্ত হাত তোলা হচ্ছে। তারপরও আবারো চেষ্টা করা হবে। এতে কাজ না হলে আইনের প্রয়োগ ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
মন্তব্য করুন