নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারা দেশে চলছে মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান। বন্ধ রয়েছে ইলিশ ধরা। তবে পদ্মাপাড়ের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জেলেরা উৎসবের আমেজে মা ইলিশ শিকার করছেন। মা ইলিশ বিক্ররি জন্য পদ্মা পাড়ে বসেছে অস্থায়ী বাজার। এছাড়া প্রতিটি গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে ইলিশ। প্রকাশ্যইে চলছে দেশের জাতয়ি মাছ ইলিশ ধ্বংসের মহোৎসব।
গতকাল শনিবার (১১ অক্টােবর) গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পানি-কাঁদা মারিয়ে দূর্গম চরকর্ণেশন কলা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, এখানে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ইলিশ বেচা-কেনার জন্য অস্থায়ী বাজার বসেছে। এই অস্থায়ী বাজারে জেলে ও মাছ ক্রতোদের জন্য অস্থায়ী খাবারের দোকান, সিংগারা-পুরীর দোকান, চায়ের দোকান, ডিজেল তেলসহ প্রয়োজনীয় নানা সমগ্রীর দোকান বসেছে। নির্বিঘেœ বেচা-কেনা হচ্ছে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ মাছ। দুর-দুরান্ত থেকে ইলিশ ক্রতোরাও অনেক কষ্ট শিকার করে ইলশ কিনতে এখানে এসেছেন। আরো চোখে পড়ে, পদ্মা পাড়েই নারী পুরুষ সবাই মিলে ইলিশ শিকারের জাল মেরামত করছেন। অপরদিকে পদ্মায় শত শত জেলে নৌকা মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছনে। কেউ আবার ইলিশ শিকার করে ফিরে আসছেন এই অস্থায়ী বাজারে। এক কথায় বলা যায়, মহা ধুমধামে কেনাবেচা চলছে মা ইলিশ। এখানকার জেলেরা অনেকটাই মারমুখী। সেখানে পৌঁছেই তাদের নানা জেরার মুখে পড়তে হয়। এসময় তারা ঔদ্ধত্ব দেখিয়ে জানায়, এখানে কোন অভিযান দল আসলে, তারা তাদের প্রতিরোধ করবেন।
মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানের সময় ইলিশ ধরা নিয়ে জেলেরা দিচ্ছে নানা যুক্তি। তারা বলছেন, পদ্মা নদীর এই এলাকায় সারা বছর খুবই কম ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। শুধু এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পরে। কেউ কেউ বলেন, ‘এই ইলিশ যদি আমরা এখন নাও ধরি, তবুও এ সকল ইলিশ পদ্মা নদীতে থাকবে না। এগুলো ভারতে চলে যাবে। তাই তারা এ ভাবে ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করছেন।

এর আগের দিন গত শুক্রবার (১০ অক্টােবর) উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের অন্তার মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে অসংখ্য জেলে নৌকা মাছ শিকার করছে। নৌকা গুলো মা ইলিশ শিকার করার পর তীরে আসলেই ক্রতোরা দরদাম করছে। এ ক্ষেেত্র ৮শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছ,ে আর ছোট সাইজের ইলিশ সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ সময় এক জেলের সাথে কথা হয়। ইলিশের দাম তো অন্যান্য সময়ের মতই, তো এখন অবৈধ ভাবে শিকার করছেন কেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘যে ইলিশ এখন ১৫শ টাকায় বিক্রি করছি, তা অন্য সময় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতো।’
আরেক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ভাটি অঞ্চলে অভিযানের কারণে জেলেরা স্বাভাবিক ভাবে নদীতে নামতে পারে না, তাই এ এলাকায় প্রচুর পরিমান ইলিশ চলে আসে। যা বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না। এসময় মা ইলিশ নিকতে আসা অনেকেই বলেন এভাবে ডিম ওয়ালা ইলিশ শিকার করলে একটা সময় নদীতে আর ইলিশের দেখা মিলবে না। তারপরও তারা কেন ইলিম কিনতে এসেছেন? জানতে চাইলে তারা বলেন, সারা বছর ইলিশের যে দাম তাতে তাদের কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই ইলিশের স্বাদ নিতে একটু কম টাকায় বাধ্য হয়ে ইলিশ মাছ কিনছেন।
আলাপকালে অসংখ্য জেলে অভিযোগ করে বলেন, পদ্মা নদীতে হাজার হাজার জেলে মাছ শিকার করলেও বেশীর ভাগ জেলেই নিশেধাজ্ঞাকালী সরকারী অনুদান পান না। যারা জেলে না, অন্য পেশায় আছেন, তারাই বিভিন্ন উপায়ে জেলে তালিকায় নাম দিয়ে অনুদান পেয়ে থাকেন। আর যারা প্রকৃত জেলে তারা কোন সরকারী সহায়তা পান না।
পদ্মা পাড়ের অন্তার মোড় এলাকায় কথা হয় ওয়াজেদ মন্ডলের (৬৫) সাথে। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ শিকারীদের সাথে অভিযানকারীদের চোর-পুলিশ খেলা দেখতে নদী পাড়ে এসেছেন। তবে নদীতে অসংখ্য জেলে নৌকা দেখতে পেলেও কোন অভিযান দেখেননি। তিনি বলেন, ‘কিসের অভিযান? সবাই তো নির্বিঘেœ ইলিশ শিকার করছেন।’
গোয়ালন্দ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আমজাদ হোসেন বিপুল (৫০) জানান, ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞা শুরু পর থেকে ভোর বেলায় ইলিশ বিক্ররি ফেরিওয়ালার হাক-ডাকে ঘুম ভাঙে। পাড়া-মহল্লায় অংখ্য মানুষ ফেরি করে ইলিশ বিক্রি করছে। তবে বিক্রি করা ইলিশ গুলো বেশীর ভাগই আকারে ছোট।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রীনাথ সাহা জানান, ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। তার মধ্যওে তাদের আভিযানিক দল যে দিকে যান, অপর দিকে সুযোগ বুঝে জেলেরা মা ইলিশ শিকার শুরু করে দেন। তাদের সমস্ত জনবল দিয়ে সার্বক্ষনিক নদীতে টহল রেখেছেন। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যওে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে মা ইলিশ রক্ষায় তারা সর্বত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছনে বলে তিনি জানান।
গোয়ালন্দ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট জানান, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে তারা সার্বক্ষনিক মা ইলিশ রক্ষার জন্য অভিযান পরিচালনার জন্য নদীতেই অবস্থান করেন। তাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এই সুযোগে জেলেরা বেপরোয়া হয়ে মা ইলিশ শিকারের চেষ্টা করে থাকে। তবে জেলেরা নদীতে মা ইলশ শিকারে আসলে বেশীর ভাগে ক্ষেেত্রই তাদের অভিযানের মুখে পড়ে বলে তিনি দাবি করেন।
মন্তব্য করুন