রুবেলুর রহমান : রাজবাড়ী নদী তীরবর্তী জেলা। এই জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মা, চন্দনা, গড়াই, হড়াই, কুমার ও চিত্রা নদীসহ অসংখ্য ছোট-বড় খাল-বিল ও পুকুর।
এসব নদী বা খাল-বিলে বড় কোন দূর্ঘটনা বা মানুষ ডুবির ঘটনা ঘটলে থাকতে হয় অন্য জেলার ডুবুরি দলের অপেক্ষায়। ততক্ষণে বেড়ে যায় হতাহত ও ক্ষতির পরিমান। এনিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভের। এদিকে রাজবাড়ীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন গুলোতে ডুবুরি দল না থাকায় যেমন ব্যাহত হয় উদ্ধার কাজ, তেমনি ডুবুরি দল ছাড়া উদ্ধার কাজে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পড়তে হয় স্থানীয়দের তোপের মুখে।
রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপসহকারী পরিচালকের কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাজবাড়ীর ৫ উপজেলায় নদী, খাল-বিল ও পুকুরে ৩০টি দূর্ঘটনায় ডুবুরি দলের প্রয়োজন হয়েছে এবং ৩০টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩০ জন। এরমধ্যে ২০২০ সালে ১০টি, ২১ সালে ৭টি, ২২ সালে ৪টি, ২৩ সালে ৩টি ও ২৪ সালে ৬টি দূর্ঘটনা ঘটেছে।
সাংস্কৃতিক কর্মী নেহাল আহমেদ বলেন, রাজবাড়ীতে অসংখ্য নদ-নদী, হাওর ও বিল রয়েছে। বর্ষার সময় এসব প্লাবিত হয়। এ সময় অনেকে নদীর পারে ঘুরতে আসে । এছাড়া নদীর পাড়ে অনেকগুলো অরক্ষিত স্কুল রয়েছে । কেউ যদি নদী বা পুকুরে পড়ে যায় বা ডুবে যায়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে এদের উদ্ধার করার কোন ব্যবস্থা রাজবাড়ীতে নাই। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে ডুবুরি দলের অপেক্ষায় থাকে। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে ডুবুরি দল আসতে আসতে সে মানুষটি অনেক দূর ভেসে যায় বা মারা যায় । এরকম ঘটনায় তাৎক্ষণিক উদ্ধারের ব্যবস্থা করা গেলে অনেক মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
নদী পারের বাসিন্দা সুফিয়া আক্তার বলেন, ডুবুরি দল না থাকায় আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। গত কয়েক মাস আগে আমাদের এখানে ছেলেরা নদীতে গোসল করতে এসে একজন ডুবে যায়। সাথে সাথে উদ্ধার কাজ করলে হয়তো তাকে উদ্ধার করতে পারতো। দুইদিন পর ডুবুরি দল এসে ওই ছেলের লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এই লাশটাই যদি ঘটনার পরপর উদ্ধার করা যেত তাহলে ওই পরিবারটা অনেক সান্তনা পেত। আমি চাই রাজবাড়ীতে সরকার যেন ডুবুরি দলের ব্যবস্থা করে।
নদী তীরবর্তী মিজানপুরের ইউনিনের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ প্লাবন আলী বলেন, রাজবাড়ী নদী তীরবর্তী জেলা। নদীতে অনেক সময় ট্রলার ডুবি ও বাচ্চারা গোসল করতে গিয়ে ডুবে যায়। কিন্তু ডুবুরি দল না থাকায় আমাদের এসব উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। প্রায় এক বছর আগে গোদার বাজার এলাকায় একজন পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসলেও ডুবুরি দলের কারণে উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি। যার কারণে ওই সময় নিখোঁজের স্বজনসহ স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের উপর চড়াও হন। মাঝে মধ্যেই শুনি নদীতে বা পুকুরে ডুবে নিখোঁজ হয়েছে, পরে ডুবুরি দল এসে লাশ উদ্ধার করে। আবার অনেক সময় লাশ পাওয়াই যায় না। আমি চাই স্থায়ীভাবে রাজবাড়ীতে ডুবুরি দল রাখার ব্যবস্থা করা হোক।
রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, রাজবাড়ী নদী তীরবর্তী জেলা হলেও ছোট জেলা হিসেব এখানে ডুবুরি দলের প্রাধিকার নাই। পার্শ্ববর্তী বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় ডুবুরি দল স্ট্যান্ড বাই থাকে, আমাদের যে কোন প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা পাই। গত পাঁচ বছরে রাজবাড়ীতে মোট ৩০ টি নৌ দুর্ঘটনায় ডুবুরি দলের প্রয়োজন হয়েছে এবং এতে ৩০ জদেব উদ্ধার করা হয়েছে। নদী, পুকুর বা খাল-বিলে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে আমাদের ফায়ার স্টেশনের উদ্ধারকর্মীরা সাধ্যমত উদ্ধার তৎপরতা চালায়। তখন ডুবুরি দলের প্রয়োজন হলে ফরিদপুরে থাকা ডুবুরি দলকে কল করা হয়। যার কারণে উদ্ধার কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় ব্যাহত এবং ঠিক ওই সময়টাতে আমাদের স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়তে হয়। তবে রাজবাড়ীতে স্ট্যান্ড বাই ডুবুরি দল রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি আকার লেখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের সময় দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে স্ট্যান্ড বাই ডুবুরি টিম রাখা হয় । ওই সময় যেকোনো দুর্ঘটনা আমরা সাথে সাথে মোকাবেলা করতে পারি। তাছাড়া ছোট ছোট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের ওয়াটার রেসকিউ টিম রয়েছে। তাদের সহযোগিতা আমরা সেটি তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করি।
মন্তব্য করুন