আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র আরও ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঘোষণা অনুযায়ী রাজবাড়ী-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারন সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদ।
রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এদিকে রাজবাড়ী-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষনা করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিমিয়। হারুন-অর-রশিদ রাজবাড়ী পাংশা মাছপাড়ার মৃত মতিউর রহমান এর ছেলে এবং তিনি রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দুই বারের সাবেক সাধারন সম্পাদক। ঢাকার প্রাইম ইউনির্ভারসিটি থেকে তিনি এলএলবি পাশ করেছেন।
এই আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দী হিসাবে ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন জামায়াত ইসলামীর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ, ইসলামী আন্দোলনের কালুখালী উপজেলা শাখার সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক, খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সেক্রেটারী ইব্রাহিম খলিল ও এনডিএম পার্টির মহাসচিব মোমিনুল আমিন। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখানে দীর্ঘদিন প্রচারনা চালিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডঃ লিয়াকত আলী বাবু, পাংশা সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উপজেলা বিএনপি নেতা মাহমুদুল হক রোজেন, বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপি নেতা আবুল হোসেন খান, সাবেক জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক র্যারিষ্টার কাজী রহমান মানিক, বিএনপি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম।
এদিকে এখন পর্যন্ত এই আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের কোন প্রার্থী ঘোষনা না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে এনসিপির সদস্য সাঈদ জামিল ও গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এর নাম শোনা যাচ্ছে।
রাজবাড়ী-২ সংদীয় আসন-২১০ (পাংশা, বালিয়কান্দি ও কালুখালী) উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে রয়েছে ২৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা । এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ১৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৫৪ এবং মহিলা ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৬১২ জন। এ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী ও ২০০১ সালে বিএনপি বিজয়ী হলেও দীর্ঘ সময় ২০২৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে আওয়ামী লীগ।
জানাগেছে, ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগের নাছির উদ্দিনকে পরাজিত করে এমপি হন জামায়াতে ইসলামীর মরহুম ডাঃ একেএম আসজাদ, ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির এবিএম নুরুল ইসলামকে পরাজিত করে এমপি হন আওয়ামী লীগের মোঃ জিল্লুল হাকিম। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মোঃ জিল্লুল হাকিমকে পরাজিত করে এমপি হন বিএনপির নাছিরুল হক সাবু, ২০০৮ সালে বিএনপির নাছিরুল হক সাবুকে পরাজিত করে এমপি হন আওয়ামী লীগের মোঃ জিল্লুল হাকিম এবং ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় এমপি হন আওয়ামী লীগের মোঃ জিল্লুল হাকিম। এছাড়া ২০১৮ সালে বিএনপির নাছিরুল হক সাবু ও ২০২৪ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হককে পরাজিত করে এমপি হন জিল্লুল হাকিম এবং এমপি হয়ে তিনি দ্বায়িত্ব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেলমন্ত্রী হিসাবে।
রাজবাড়ী-২ আসনে ধানের শীষের মনোনিত প্রার্থী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ভাল একটি সংবাদ পেলেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থ্যতার কারণে খুশি হতে পারছি না। তবে এই মনোনয়ন প্রাপ্তের খবরে আমরা শুকরানা নামাজ আদায় করে দেশনেত্রীর সুস্থ্যতার জন্য দোয়া করে এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে যাব এবং সবাইকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী কাজ শুরু করবো।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডঃ লিয়াকত আলী বাবু বলেন, আজ আমাদের রাজবাড়ী-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসাবে হারুন-অর-রশিদ এর নাম ঘোষনা করা হয়েছে। এরআগে হয়েছে রাজবাড়ী-১ আসনে প্রার্থী হিসাবে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম এর নাম ঘোষনা হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নাই, আমরা ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষের লোক। ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজবাড়ীর দুইটি আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করবো ইনশাল্লাহ।
যেসব আসনে আজ প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেই আসনগুলো হলো; ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, যশোর-৫, নড়াইল-২, খুলনা-১, পটুয়াখালী-২, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-৪, কিশোরগঞ্জ-১, কিশোরগঞ্জ-৫, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সিগঞ্জ-৩, ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১৮, গাজীপুর-১, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, সুনামগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৪, সিলেট-৪, হবিগঞ্জ-১, কুমিল্লা-২, চট্টগ্রাম-৩, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১৫ ও কক্সবাজার-২।
৩৬ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকা : রাজবাড়ী-২ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আব্দুস সালাম, দিনাজপুর-৫ আসনে একেএম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলু, নাটোর-৩ আসনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা, যশোর-৫ এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মো. মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনে আমির এজাজ খান, পটুয়াখালী-২ মো. শহিদুল আলম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে জয়নাল আবেদিন, ঝালকাঠি-১ আসনে রফিকুল ইসলাম জামাল, টাঙ্গাইল -৫ আসনে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ময়মনসিংহ-৪ আসনে মো. আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মো. মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মজিবর রহমান, মানিকগঞ্জ-১ আসনে এস এ জিন্নাহ কবির, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা-৭ আসনে হামিদুর রহমান, ঢাকা- ৯ আসনে হাবিবুর রশিদ, ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-১৮ আসনে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজীপুর-১ আসনে মো. মজিবুর রহমান, ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসির উল ইসলাম, মাদারীপুর-১ আসনে নাদিয়া আক্তার, মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান, সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চোধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম, সিলেট-৪ আসনে আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে রেজা কিবরিয়া, কুমিল্লা-২ আসনে মো. সেলিম ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, ঢাকা-৯ আসনে মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নাজমুল মোস্তফা আমিন, কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। গুলশানে দলটির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসনে নির্বাচন করবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটে দাঁড়াবেন বগুড়া-৬ আসন থেকে; আর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী হবেন ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা-৩, আমান উল্লাহ আমান ঢাকা-২, ইসরাক হোসেন ঢাকা-৬, মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮, সাইফুল আলম নীরব ঢাকা-১২, সানজিদা ইসলাম তুলি ঢাকা-১৪, আমিনুল হক ঢাকা-১৬, ড. আব্দুল মঈন খান নরসিংদী-২, শামা ওবায়েদ ইসলাম ফরিদপুর-২, নায়াব ইউসুফ আহমেদ ফরিদপুর-৩, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা-১, আব্দুল আওয়াল মিন্টু ফেনী-৩, জয়নাল আবেদীন ফারুক নোয়াখালী-২, বরকত উল্লাহ বুলু নোয়াখালী-৩, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী লক্ষীপুর-৩, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম-১০, সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজার-১, মো. ফজলুল রহমান কিশোরগঞ্জ-৪, মো. লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা-৪, নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা-২, রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনা-৩ ও আজিজুল বারী হেলাল খুলনা-৪ সংসদীয় আসনে প্রার্থী হবেন।
মন্তব্য করুন